এক কবরেই দাফন দগ্ধ দাদি-নাতনির – দৈনিক আজাদী

এক কবরেই দাফন দগ্ধ দাদি-নাতনির – দৈনিক আজাদী

রাঙ্গুনিয়ায় বসতঘরে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া দাদি ও নাতনিকে ময়নাতদন্ত শেষে এক কবরেই দাফন করা হয়েছে। ঘটনার পর উদ্ধার কাজ চালানোর সময় দাদি রুবি আক্তারের (৫৫) বুকের মধ্যেই মিলেছিল নাতনির লাশ। মাবাবা আলাদা বসতঘরে থাকলেও দাদির সাথেই থাকতো নাতনি। প্রায়শই ঘুমাতে চলে আসত দাদির বাড়ি। এবার এই দুর্ঘটনার পর দাদির সাথে এক কবরেই চির নিদ্রায় শায়িত হলো ছোট্ট জান্নাত ()

সরেজমিনে দেখা গেছে, দাদিসহ দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া নাতনির মাথার চুল এখনো পড়ে আছে বাড়ির উঠানে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এই চুলগুলো ঘটনাস্থলে হাতের কাছে পেয়েছিলন মা শাহেদা আক্তার, পরম মমতায় বুকে আঁকড়ে ধরে বিলাপ করে কাঁদছেন তিনি। মায়ের এমন আহাজারিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত কেউই। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দিতে গিয়ে এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন মোহাম্মদ কামরুল হক নামে এক যুবক। এরকম একটি স্থিরচিত্র ফেসবুকে শেয়ার করতেই নেটিজেনরা হৃদয়বিদারক এই ঘটনা নিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। গত বুধবার ভোরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের কাদেরিয়া পাড়া মুন্সিটিলা এলাকায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে ছয়টি বসতঘর পুড়ে গেছে। এরমধ্যে একটি বসতঘরে দাদি রুবি আক্তারের সাথে পুড়ে মারা যায় নাতনি জান্নাত আকতার। তাদের দু’জনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে একইদিন রাতে কাদেরিয়া পাড়া মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়। তাদের এক কবরেই দাফন করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা সৈয়দ শহিদুল আমিন মুরাদ।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিহত শিশু কন্যার পিতা সিএনজি টেঙি চালক মো. সুমন জানান, তিনি স্ত্রী নিয়ে পোমরা ইউনিয়নের নাজিম চেয়ারম্যান বাড়িতে থাকেন। অন্যদিকে দাদি রুবি আক্তার থাকতেন কাদেরিয়াপাড়া এলাকায়। তার দুই মেয়ের মধ্যে ৯ বছর বয়সী বড় মেয়ে প্রায়শই দাদির সাথে থাকতে চলে আসত। ঘটনার আগেরদিন তাকে রাঙামাটি নানার বাড়ি এলাকায় স্কুলে ভর্তির জন্য রেখে এসেছিলেন স্ত্রী শাহেদা। অন্যদিকে ছোট মেয়ে জান্নাতকে রেখে গিয়েছিলেন দাদির সাথে। ঘটনার আগেরদিন তাকে নিতে বাবা সুমন এলেও সে দাদিকে ফেলে যায়নি। তাই মেয়েকে আদর করে দোকান থেকে এটাসেটা কিনে দিয়ে তার দাদির সাথে রেখেই চলে গিয়েছিলেন বাবা সুমন।

ঘর থেকে কেনো বের হতে পারেননি জানতে চাইলে সুমন জানান, রাতে ঘুমানোর সময় তার মা ঘরের দরজা ভেতর থেকে তালাবদ্ধ করে রাখতেন। আগুন লাগার পর সম্ভবত তাড়াহুড়োর মধ্যে তালার চাবি খুঁজে পাননি। এরমধ্যে নাতনিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রেখে বাঁচাতে চেয়েছিলেন দাদি রুবি আক্তার। নিথর দেহ উদ্ধারের সময় দাদির বুকের মধ্যেই পাওয়া গিয়েছিলো নাতনি জান্নাতকে।

Explore More Districts