রেমিট্যান্স কমলো ৩৫ হাজার কোটি টাকা

রেমিট্যান্স কমলো ৩৫ হাজার কোটি টাকা

সদ্যবিদায়ি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।প্রণোদনা বাড়ানোসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও কেন রেমিট্যান্স কমে গেল সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন যে, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে ভিন্ন পথে রেমিট্যান্স বেশি আসছে। কারণ প্রণোদনার পরও ভিন্ন পথে টাকা পাঠালে বেশি টাকা পাওয়া যায়। সে কারণে বৈধ পথ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কম হয়েছে।ব্যাংকাররা বলছেন, ডলারের রেট ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে বেশি থাকে। তখন বৈধ চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স বেশি আসে। এখন এক ডলার রেমিট্যান্সের বিপরীতে ব্যাংক ৯৩ থেকে ৯৪ টাকা দিচ্ছে। সঙ্গে যোগ হচ্ছে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা। সব মিলিয়ে ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু খোলা বাজারে ডলার ৯৮ থেকে ৯৯ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে ভিন্ন পথে রেমিট্যান্স এলে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে, এ কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কম।রেমিট্যান্স কমার বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, কয়েকটি কারণে রেমিট্যান্স কমছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো—গত বছর যে রেমিট্যান্স এসেছিল, তা ছিল আর্টিফিশিয়াল। অর্থাৎ যেসব অর্থ হুন্ডিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশে আসত, গত বছর করোনার কারণে বিশ্বে যাতায়াত বন্ধ থাকায় ঐ অর্থটা ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে, যার কারণে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে। এখন আবার যাতায়াত শুরু হয়ে গেছে। ঐ অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে এখন আর আসছে না। তাই রেমিট্যান্স কমেছে।

তিনি বলেন, আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে এখন কার্ব মার্কেটের সঙ্গে ব্যাংকের মানি এক্সচেঞ্জ রেটের ব্যবধান অনেক বেশি; সাত থেকে আট টাকা। এ ব্যবধান থাকলে ব্যাংকিং চ্যানেলে লোকজন রেমিট্যান্স পাঠাবে না। তাই যে কোনো মূল্যেই হোক কার্ব মার্কেটের সঙ্গে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের রেট সমন্বয় করতে হবে; ব্যবধান এক-দুই টাকায় নামিয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকার না বুঝেই শুধু প্রণোদনা দিচ্ছে। প্রণোদনা দিলে রেমিট্যান্স বাড়বে এটা মনে করা সম্পূর্ণ বোকামি। এসব প্রণোদনা দিয়ে কোনো লাভ নেই; শুধু শুধু হাজার কোটি টাকা জলে ফেলছে সরকার। এর চেয়ে বড় বিষয় হলো আমরা যদি বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ করি এবং ডলারের রেট সমন্বয় করি পাশাপাশি বিদেশে দক্ষ লোক পাঠানোর পদক্ষেপ নিই তাহলেই রেমিট্যান্স বাড়বে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গেল জুন মাসে ১৮৩ কোটি ৭২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এ অঙ্ক আগের মাসের চেয়ে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার কম। চলতি বছরের মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। আর আগের বছরের জুনের মাসের তুলনায় ১০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার কম। গত বছর মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১৯৪ কোটি ৮ লাখ ডলার।

২০২১-২২ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৩ দশমিক ৪৫ টাকা ধরে)। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে গেল অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে রেমিট্যান্স কমেছে ৩৭৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার অর্থাৎ দেশীয় মুদ্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ, আগস্টে ১৮১ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ, অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ, নভেম্বর ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ, ডিসেম্বরে ১৬৩ কোটি এবং জানুয়ারিতে এসেছে ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে আসে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ, মার্চে পাঠিয়েছিল ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ, এপ্রিলে ২০১ কোটি ৮ লাখ, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার এসেছে এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ১৮৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার।

Explore More Districts