মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রারে এক যুগের দলিল ধ্বংসের ঘোষণা | munshiganjnews.com

মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রারে এক যুগের দলিল ধ্বংসের ঘোষণা | munshiganjnews.com

মোহাম্মদ সেলিম
মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের এক যুগ আগের মুল দলিল ধ্বংস করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে যেসব দলিল গ্রহিতারা এক যুগ ধরেও তাদের দলিল নিচ্ছে না তা মুলত ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিস।

মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের গুদামে ধ্বংসকৃত দলিল গুলো এখন মজুদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকৃত অর্থে মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যাবতীয় রেজিস্ট্রাকৃত দলিলসমুহ ধ্বংস করা হবে। উল্লেখিত সালের মধ্যে যেসব দলিল এখানে করা হয়েছে সেগুলো ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

চলতি মাসের ২৮ তারিখে প্রাথমিকভাবে উল্লেখিত সালের দলিলগুলো ধ্বংসের আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিস। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এই সময় আবারো কিছুদিনের জন্য বাড়তে পারে। তবে সময়টা খুবই কম সময় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পূর্বের ঘোষণার তারিখ এখনো বহাল রয়েছে। ঘোষণার সূত্র মতে জানা গেছে, ২০১২ সালের পহেলা জানুয়ারির পূর্বে মুল দলিল গ্রহিতারা ধ্বংসের ঘোষিত তারিখের আগেদিন পর্যন্ত তাদের দলিল সংগ্রহ করতে পারবেন।

মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিস এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিলেও আমজনতা এ বিষয়ে প্রকৃত অর্থে কিছুই জানে না বলে জানা গেছে। একজন দলিল গ্রহিতার কাছে দলিল একটি মুল্যবান সম্পদ। সেই দলিল গ্রহিতা কোনভাবে জানতে পারছেন না যে, তার দলিল মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিস নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে।

বিপুল অর্থ ব্যয় করে একজন দলিল গ্রহিতা তার দলিল রেজিস্ট্রাট করে থাকেন। যখন দলিল গ্রহিতা দলিল রেজিস্ট্রাট করে থাকেন তখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ধর্ন দিয়ে তখন সেই দলিল গ্রহিতা না পেয়ে এক সময়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। এক সময়ে এ বিষয়ে হাল ছেড়ে দেন। এসব কারণে এখানে আজ দলিলের স্তুপ গড়ে উঠেছে।

আর তাই এখন তা ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে। এ ধরণের উদ্যোগের আগে আমজনতার মাঝে তৃণমূল পর্যায়ে মাইকিং করা হলে অনেকটাই ভালো হতো বলে অনেকেই মনে করছেন। দলিল নানা রকমের হয়ে থাকে। প্রকৃত অর্থে জমি সংক্রান্ত দলিল সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

আর তারপরে দলিল হয়ে থাকে ব্যাংকের মর্গের (বন্ধকি) দলিল। মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কোন কোন ধরণের কি পরিমাণ দলিল ধ্বংস করা হবে তার কোন তথ্য অনুসন্ধানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ডিজিটাল যুগে এ বিষয়টি মান্ধাতা আমলের পথে হাটছেন মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিস। এদিকে মুন্সীগঞ্জ সদর

সাব রেজিস্ট্রার অফিসে এ ঘটনায় তারিখ বিহীন পত্র ইস্যু করেছেন। যা হাস্যকর বলে অনেকে মনে করছেন। সরকারি দপ্তরে এ ধরণের ঘটনা সাধারণত ঘটে বলে অনেকেই মনে করেন।

জানা গেছে, আই.জি.আর স্মারক নং ১১৮১৬ (৬১) তারিখ হচ্ছে ০৬/১১/২০১৬ ও জেলা রেজিস্ট্রার অফিস স্মারক ৩২৭ (৬) তারিখ হচ্ছে ০৫/১০/২০২১ এর পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিস উল্লেখিত সালের দলিলসমুহ ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নেন।

মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের স্মারক নং ১৬৯ (১৮) তারিখ বিহীন সদর সাব রেজিস্ট্রার একেএম ফয়েজ উল্ল্যাহর স্বাক্ষরিত একই পত্রে দুই পর্বের সদয় অবগতির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে রয়েছে জেলা প্রশাসক, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও

মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে জেলা রেজিস্ট্রার অফিস, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা ভূমি অফিস, আধারা ইউপি, পঞ্চসার ইউপি, চরকেওয়ার ইউপি, মোল্লাকান্দি ইউপি, বজ্রযোগিনী ইউপি, রামপাল

ইউপি, শিলই ইউপি, বাংলাবাজার ইউপি, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন মুন্সীগঞ্জ শাখা, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ ব্যাংলা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও সভাপতি দলিল লেখক সমিতি।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ.এফ.এম. আরিফউজ্জামান দিদার বলেন, সরকারি বিধিমালা অনুযায়ি এক যুগ পর পর এভাবে দলিল ধ্বংস করা হয়ে থাকে। বালাম বইয়ে দলিল সংযুক্ত করার পর দুই বছর অপেক্ষা করা হয় দলিল দেয়র জন্য। তার পরেও যদি দলিল গ্রহিতা না আসে তারপরে তা ধ্বংস করা হয়।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন ব্যাংক ম্যানেজার বলেন. মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্টার অফিসের দায়িত্ব ছিল এ বিষয়ে আমজনতার মাঝে মাইকিংয়ে প্রচার করা। তা হলে বিষয়টি ভলো হতো।
বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন পীর বলেন, এই সংক্রান্ত পত্র তিনি পেয়েছেন। ইউপি সচিব ও

মেম্বারদের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে এই বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।
রামপাল ইউপি চেয়ারম্যান হাজি বাচ্চু শেখ ও পঞ্চসার ইউপি চেয়ারম্যান হাজি গোলাম মোস্তফার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার জানান, সদয় অবগতির পত্রের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।

পরে সচিবের সাথে আলোচনা করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
মুন্সীগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার একেএম ফয়েজ উল্ল্যাহর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আপনি নকলবীশ আরিফের সাথে যোগাযোগ করেন। এ বিষয়ে আরিফ জানান, ধবংসের প্রক্রিয়ায় কি পরিমাণ দলিল

গুদামে মজুদ আছে তা তিনি জানেন না। এগুলো কি ক্যাটাগরির দলিল তাও তিনি জানেন না। তিনি জানান, দলিল ধ্বংসের দিন জেলা প্রশাসক বা তার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। তবে ধ্বংসের তারিখ পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এই বিষয়ে আরেকটা নতুন তারিখ আসবে।

জেলা রেজিস্টার শেখ মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, দলিল রেজিস্ট্রাট হওয়ার পর বালাম বইয়ে অর্ন্তভুক্ত হওয়ার পরই গ্রহিতা দলিল পেয়ে থাকেন। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এখানে দলিল পরে থাকার পরেও গ্রহিতা দলিল নিতে না আসায় তা এখন ধ্বংসের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মুল দলিল বালাম বইয়ে রাখা হয়েছে। কেউ চাইলে

তখন বালাম বই থেকে নকল তুলে নিতে পারবে। এছাড়া ধ্বংস দলিল গুলো বালাম বইয়ে সংযুক্ত করা হবে। তখন আর দলিল গ্রহিতারা কোনভাবেই অসুবিধায় পরবেন না বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি জানান, সরকারি কাজে তৈরি দলিল এই ধ্বংস যজ্ঞের বাইরে রয়েছে। কৃষি সংক্রান্ত কাজে তৈরি দলিল ও সরকারিভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কোন দলিল এই ধ্বংসের তালিকায় নেই।

Explore More Districts