ট্রোসা, সিএনআরএস, এসইআই ও অক্সফাম -এর যৌথ আয়োজনে চাঁদপুরে ‘মৎস্য খাতে লিঙ্গ সমতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক বৈধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলায় এলিট চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এই আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দীন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগতম বক্তব্য রাখেন এসইআই এশিয়া’র রিসার্চ ফেলো ড. সিজউইলে খোজা এবং উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ট্রোসা, সিএনআরএস -এর প্রজেক্ট অফিসার রিফার মঞ্জুর রনি। গবেষনার ফলাফল উপস্থাপন করেন এসইআই এশিয়া’র জুনিয়র কনসালট্যান্ট মোঃ মাহবুব-উল-হক।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ আমিরুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রিভার) ইমতিয়াজ আহমেদ, অক্সফাম বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শান্তা সোহেলী ময়না, সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্সেস স্টাডি সেন্টার এর এক্সিকিউটিভ সিনিয়র পোগ্ৰাম ম্যানেজার মোখলেসুর রহমান সুমন, লেখক ও গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান, সাংবাদিক ও লেখক আশিক বিন রহিমসহ জেলে সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিগনসমাপনিগণ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বক্তব্যে বলেন, পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই অবকাঠামোগত এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর কারণে মানুষ বিভিন্ন পেশা বেছে নেয়। আমাদের দেশে বৃহত্ত একটি জনগোষ্ঠী নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেকেই বংশ পরম্পরায় এই কাজের সাথে জড়িত। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মৌসুমী জেলেও এই পেশায় সম্পৃক্ত হয়েছেন। আমাদের দেশের সরকার নদীতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে পুরুষ জেলেদের পাশাপাশি অনেক নারী জেলে নদীতে মাছ ধরার সাথে সম্পৃক্ত। তবে এই সংখ্যাটা অনেক কম। আমরা মনে করি নারীদের নদীতে মাছ শিকারে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। কাউকে জোর করে জেলে বানানো কিংবা জেলে পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য করা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে মানুষ যেই পেশায় থাকুক, সে যেন কোন প্রতিবন্ধকতা শিকার না হয়, সেটি নিশ্চিত করা। মৎস্য খাতে লিঙ্গ সমতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি বিশ্লেষণ’ এই গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
কর্মশালায় ট্রোসা, সিএনআরএস, এসইআই ও অক্সফাম এবং যেমন ব্রাক আশা সূর্যের আলো ক্লিনিকের কর্মকর্তা বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য: ট্রান্সবাউন্ডারি রিভারস অফ সাউথ এশিয়া (TROSA) ফেজ ২: নদী, অধিকার এবং স্থিতিস্থাপকতা (T2:3R) এই চার বছরের (২০২৩-২০২৬) আঞ্চলিক প্রোগ্রামটি সুইডিশ সরকারের অর্থায়নে এবং অক্সফাম নভিব দ্বারা পরিচালিত। প্রোগ্রামটির উদ্দেশ্য হলো শেয়ারকৃত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী সহযোগিতা তৈরি করা এবং নদী তীরবর্তী কমিউনিটিগুলোর স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করা, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে মোকাবিলা করার জন্য। কাজটি নেপাল, ভুটান, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা (GBM) নদী বেসিনে সম্পাদিত হচ্ছে। স্টকহোম এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউট (SEI), ট্রান্সবাউন্ডারি রিভারস অফ সাউথ এশিয়া ২.০ (TROSA2) উদ্যোগের অধীনে, সম্প্রতি একটি গুণগত গবেষণা পরিচালনা করেছে যা মৎস্য খাতে লিঙ্গভিত্তিক বিষয়গুলো অনুসন্ধান করেছে। এই গবেষণাটি নারীদের ভূমিকা এবং অবদান, তাদের সম্মুখীন হওয়া প্রতিবন্ধকতা, এবং জেলে সম্প্রদায়ের সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলো, বিশেষ করে কম মৎস্য পাওয়ার মৌসুম এবং মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞার সময়গুলোতে দৃষ্টি নিবন্ধ করেছে। গবেষণাটি চাঁদপুর ও কুড়িগ্রাম এই দুইটি নদী তীরবর্তী জেলার উপর মনোনিবেশ করেছে, যা মৎস্য কমিউনিটির মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক-পরিবেশগত ও জীবনযাত্রার অবস্থা প্রতিফলিত করে। গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল গুলি মৎস্য ধরার কাজে লিঙ্গভিত্তিক বিভিন্ন ভূমিকা এবং চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করে, বিশেষ করে GESI (লিঙ্গ সমতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি) দৃষ্টিকোণ থেকে। এই কর্মশালার উদ্দেশ্য হলো স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করা, গবেষণার ফলাফল যাচাই করা এবং তা সমৃদ্ধ করা। কর্মশালার উদ্দেশ্য : ১. মৎস্য খাতে GESI গবেষণার ফলাফল স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের সাথে শেয়ার করা, যার মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাগণ, কমিউনিটি সদস্যরা এবং অন্যান্য এনজিও প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত। ২. গবেষণার ফলাফল এবং প্রস্তাবিত সুপারিশসমূহে কোনো গ্যাপ, কনটেক্সটুয়াল নান্স বা বিবাদের চিহ্নিত করা যা আরও বিশ্লেষণের প্রয়োজন। ৩. স্টেকহোল্ডারদের সাথে সম্পৃক্ততা এবং ফলাফলগুলির মালিকানা শক্তিশালী করা।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম/ ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫