এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রে ভোটপ্রচারের কর্মসূচি বাতিল করে দিল্লি ফিরে গেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রোববার (১৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
এদিকে শনিবার ইম্ফলে তিন মন্ত্রী এবং ছয়জন বিধায়কের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পৈতৃক বাড়িতেও আগুন ধরানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এরপরই মহারাষ্ট্রে প্রচারণা কর্মসূচি বাতিল করে দিল্লি ফিরে গেলেন অমিত শাহ।
সংবাদমাধ্যম বলছে, শুক্রবার এবং শনিবার মণিপুর থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মেইতেইরা মনে করছে, ওই ছয়জনের মরদেহ জিরিবাম থেকে অপহৃত তিন নারী এবং তিন শিশুর। তারা একই পরিবারের সদস্য ছিলেন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কুকি বিদ্রোহীরা তাদের অপহরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
যদিও মণিপুর সরকারের পক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহের পরিচয় নিয়ে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার পিডব্লিউডি মন্ত্রী গোবিন্দাস কন্ঠৌজাম, বিজেপি বিধায়ক ওয়াই রাধেশ্যাম, বিজেপি বিধায়ক পাওনাম ব্রজেন, কংগ্রেস বিধায়ক টিএইচ লোকশ্বরের বাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে। সেসময় মন্ত্রী, বিধায়ক এবং তাদের পরিবারেরা সদস্যরা বাড়িতে ছিলেন না। ইম্ফল পূর্বে লুয়াংশাংবামে মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের পৈতৃক বাড়িতে হামলার অভিযোগও উঠেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলসের জওয়ানদের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভ দমন করতে রবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ এবং নিরাপত্তাবাহিনী। তারপরও মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন যাওয়ার পথে অবরোধ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে লোহার রড ফেলে রাখা হয়েছে।
হামলাকারীদের দাবি, জিরিবাম জেলায় ছয়জনকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। জিরিবাম, ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিমে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, বিষ্ণুপুর, চূড়াচাঁদপুরসহ মোট সাত জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মূলত ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহের শুরুতে। মণিপুরের জিরিবামে কুকি বিদ্রোহী এবং সিআরপিএফ জওয়ানদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। অভিযোগ রয়েছে, সেই সময় একদল কুকি বিদ্রোহী মেইতেই সম্প্রদায়ের তিন নারী এবং তিন শিশুকে অপহরণ করে।
অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ১০ কুকি বিদ্রোহী। যদিও কুকি সম্প্রদায়ের দাবি, নিহত ১০ জন ছিলেন ‘গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী’। তাদের মরদেহ মিজোরামে নিতে চেয়ে গত সোমবার থেকে শিলচরের হাসপাতালের মর্গ ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন কুকিরা।
শনিবার সকালে পুলিশ ১০ জনের মরদেহ নিয়ে কুকি অধ্যুষিত চুরাচাঁদপুরের দিকে রওনা হলে তাদের ঘেরাও করেন কুকিরা। বিক্ষোভ দমন করতে লাঠি চালায় পুলিশ। আর এর মধ্যেই ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার ঘিরে শুরু হয় মেইতেইদের বিক্ষোভ।
প্রসঙ্গত, প্রায় দেড় বছর আগে ২০২৩ সালের মে মাসে কুকি ও মেইতেই উপজাতির মধ্যে সাম্প্রতিক দাঙ্গা শুরু হয়। শেষ কয়েক মাস পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও রাজ্যটি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মূলত উপজাতিদের জন্য নির্ধারিত কোটা নিয়ে এই সংঘাতের সৃষ্টি হয়।