এদিকে জালভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে করিমপুর, আমদিয়া ও কাঠাঁলিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
আহতরা হলেন- মো. সবুজ মিয়া (২২), মাজারুল ইসলাম (৩০), শাহালম মিয়া (৩২), সাদেক মিয়া (১৮) হুমায়ূন মিয়া (২৯), রওশুনারা বেগম (৪২), কামরুল মিয়া (২৮), হালিম মিয়া (৩০), শুকুর আলি (২২), ইসমাইল মিয়া (৩০), আলিউল্লা (১৯), দেলোয়ার হোসেন (৩৫), সাকিব (২৩), ইকরামনি (১২), সজিব (২৩), সেলিম মিয়া (৫২), কাজল মিয়া (৪৬), হিমেল (৩২), আলামিন (২৮), মোয়াজ্জেম হোসেন অপু (২৫), রনি আহম্মদ (৩০), ইমন আহম্মদ (২৫), ইয়ামিন (২০) ও রিপন (৩২)।
স্থানীয়রা জানান, রবিবার দুপুরে সদর উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের শ্রীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়াকে অবরুদ্ধ করে নৌকার প্রার্থী মুমিনুর রহমান আপেলের সমর্থকেরা। এরই জের ধরে নৌকার প্রার্থী মুমিনুর রহমান আপেল করিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গেলে তাকে অবরুদ্ধ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা।
তারা আরো জানায়, এ ঘটনায় দুপক্ষের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা শুরু হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়।
এদিকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে চিনিশপুর ইউনিয়নের চিনিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক মো. সাঈদ আনোয়ার ও মেম্বার পদপ্রার্থী সায়েম ভূইয়াসহ কয়েকজন আহত হয়। এ সময় পুলিশ ৪টি তাজা ককটেল উদ্ধার করে।
এদিকে নজরপুর ইউনিয়নের দিলালাপুর কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ওই সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। পরবর্তীতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।অন্যদিকে দুর্গম চরাঞ্চল কালাই গোবিন্দপুরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কেন্দ্র দখল করে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকেরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ভোট গ্রহণ শুরু করে।এ ছাড়া আমদিয়া, শীলমান্দী, পাইকারচর ও রায়পুরা উপজেলার মরজাল ও অলীপুরা ইউনিয়নে বিক্ষিপ্তভাবে ককটেল বিস্ফোরণ, হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ৩০ জন আহত হয়েছে। আহতদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
সংঘর্ষে আহত দেলোয়ার হোসেন নামে একজন বলেন, নজরপুর ইউনিয়নের দড়িনবীপুরে নৌকার সমর্থকেরা কেন্দ্র দখল করতে আসলে আমরা বাধা দিই। পরে তারা টেঁটা, লাঠি, আগ্নেয়াস্ত্র সহ আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে গুলিবিদ্ধসহ অনেকে গুরুতর আহত হয়েছে।
তিন ইউনিয়নে ভোট বর্জন
এদিকে জালভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতীক) নাজিম উদ্দিন ভূইয়া রিপন, কাঁঠালিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জহিরুল ইসলাম হিরন মোল্লা ও করিমপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া ভোট বর্জন করার ঘোষণা দেন।
নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘আমি সকাল থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে ঘুরেছি। ১০ কেন্দ্রের কোনোটিতেই আমার কোনো এজেন্ট নেই। চারটি কেন্দ্রে আমি উপস্থিত থেকে এজেন্ট দিলেও চলে আসার পরই তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। বহিরাগতরা এসে প্রতিটি কেন্দ্র দখল করে নিয়েছেন, তারা প্রকাশ্যে সিল মারছেন। ’
তাদের জীবন হুমকির মধ্যে থাকায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আবদুল বাকী বলেন, সকাল থেকে নির্বাচনী সহিংসতায় ৬০ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে থেকে ২৫ জন গুলিতে আহত হয়েছে। গুরুতর আহত তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) হারুনুর রশীদ আমাদের নরসিংদী ডটকমকে বলেন, কয়েকটি কেন্দ্র ছাড়া সবগুলোতেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। কিছু কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে কয়েকজন আহত হয়েছে। আর মাথায় ইটের আঘাত পেয়ে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পর তিনি এখন সুস্থ আছেন। সবখানেই পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।