হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজীবাজার এলাকায় হযরত শাহ সোলেমান ফতেহগাজী বাগদাদী (রহঃ) বন্দেগী টিলার প্রধান প্রবেশ গেইটের সামনে সরকারি খাস জমি দখল করে দীর্ঘদিন ধরে একটি অবৈধ টং দোকান পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে ।
অভিযোগ রয়েছে , ওই দোকানের আড়ালে নিয়মিত মাদক সেবন করা হয়। যার ফলে মাজারে আগত জিয়ারতকারী ও পার্শবর্তী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনকে চোখে ফাঁকি দিয়ে সরকারি ডিসি খতিয়ানের ১ নং খাস পরিত্যক্ত জমিতে অবৈধ ভাবে টং দোকানটি স্থাপন করা হয়েছে । এতে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আগত জিয়ারতকারীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন, তেমনি দীর্ঘদিন ধরে বন্দেগী টিলার ওই প্রবেশপথ সংলগ্ন গাউছিয়া নূরানী ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাফিজিয়া ও এতিমখানা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও লেখাপড়ার পরিবেশ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, বন্দেগী টিলার প্রবেশ পথে দোকান বসানোর কারণে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ পথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
প্রতিবাদ জানাতে গেলে দোকানদার অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ স্থানীয় প্রভাবশালী পেশীশক্তির ভয় দেখিয়ে হুমকি দিয়ে থাকেন । এ কারণেই ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় নিরুপায় হয়ে এক নিরিহ নারী হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায় , মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের মৃত – লবজ উল্লাহ পুত্র মোঃ ফারুক মিয়া দীর্ঘ দিন ধরে সরকারি খাস জমিতে অবৈধ ভাবে টং দোকান পরিচালনা করে আসছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বন্দেগী টিলার মাজার জিয়ারতকারী, মৃত ব্যক্তির কবর এর ওয়ারিশান ও টিলার খাদেমরা জানান , জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত প্রধান প্রবেশ গেইটের উদ্বোধনী ভিত্তিপ্রস্তর ঢেকে পরিত্যক্ত জায়গায় টং দোকান বসানো হয়েছে এবং সেখানে আড়ালে মাদক সেবন করা হচ্ছে। ফলে পথচারীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। তবে অভিযুক্ত মোঃ ফারুক মিয়া অভিযোগ গুলো অস্বীকার করে দাবি করেন ।
বন্দেগী টিলার প্রবেশ গেইট ” মুরশী সম্পদ ” এবং এটি সরকারি খাস জমি নয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এলেও তাকে উচ্ছেদ করা যাবে না বলেও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য দেন তিনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , সিলেটের ৩৬০ আউলিয়ার একজন শাহজীবাজার এলাকায় হযরত শাহ সোলেমান ফতেহগাজী বাগদাদী (রহঃ) মাজার শরিফের প্রায় ১শ গজ পূর্ব পাশে সাবেক জেলা প্রশাসক ইসরাত জাহান এর উদ্যোগে বন্দেগী টিলার প্রবেশ পথে নির্মিত একটি বড় গেইট রয়েছে । এই গেইট দিয়েই প্রতিদিন শত শত জিয়ারতকারী মাজারে প্রবেশ করেন। বার্ষিক পবিত্র ওরশ উপলক্ষে লক্ষাধিক আশেকান ভক্তবৃন্দের সমাগম হলে চলাচলে চরম দুর্ভোগ দেখা দেয় । গেইটের সামনেই টং দোকান থাকায় পরিস্থিতি আর-ও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে । মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানান , টং দোকানের কারণে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও পড়াশোনার পরিবেশ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় সচেতন মহলের মুরুব্বি ও জিয়ারতকারীর অভিযোগ , একটি প্রভাবশালী চক্র রাজনৈতিক দলের পরিচয়ের আড়ালে সরকারি জমি দখল করে মাদক সেবন সহ অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে । বিষয় টি নিয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনী ক্যাম্প কমান্ডার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে । পুলিশ সুপারের নির্দেশে মাধবপুর থানা পুলিশ সরজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বলে জানা গেছে । তবে জেলা প্রশাসক নির্দেশে মাধবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা বিষয় গুলো তদন্ত করার জন্য আদেশ পাঠানো হয় । উক্ত আদেশটি সরজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বাঘাসুরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী তহশিলদার লোকমান মিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ।
জেলা প্রশাসনের নির্দেশ থাকা নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এখনো সরকারি জমি থেকে অবৈধ টং দোকান উচ্ছেদ না হওয়ায় স্থানীয় ও জিয়ারত কারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। দ্রুত সরকারি খাস জমি থেকে অবৈধ টং দোকান উচ্ছেদে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে যে কোনো সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ।


