সিলেট বিমানবন্দর এলাকার বড়শালা। ১৯৭১ সালে তৎকালীন মডেল স্কুলের (বর্তমানে সিলেট ক্যাডেট কলেজ) ভবনে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্প। সেই ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন পেশার বাঙালিদের ধরে নিয়ে বন্দি করে রাখা হতো। সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের নিয়ে আসত পাকিস্তানি সেনারা। তাদের হত্যা করে গণকবর দেওয়া হয় স্কুলের পাশেই।
সর্বশেষ ৭১ জন শহীদের তালিকা উদ্ঘাটন করা হলেও এই অঞ্চলের হাজারের অধিক মানুষ হত্যা করা হয়েছে সেখানে। আর তাদের গণকবর দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকদের।
শহীদদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল ফজল জিয়াউর রহমান, মেজর আব্দুল্লাহ, ক্যাপ্টেম খালেদসহ রয়েছেন চা বাগান শ্রমিক, নারী ও নিরীহ বাঙালিরা।
সিলেটের সেই গণকবরটির কথা সবাই জানলেও কাদের কোথা থেকে ধরে নিয়ে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তার কোনো পরিচয় ও পরিসংখ্যান ছিল না। ছিল না গণকবরটি সংরক্ষণের উদ্যোগও। করোনকালে স্মৃতি রক্ষায় উদ্যোগী হন শহীদ পরিবারের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বীরপ্রতীক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ। তিনি সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিনের ছেলে। এতে সহায়তা করেন সেনাবাহিনীর এরিয়া কমান্ডার ও ক্যাডেট কলেজ কর্তৃপক্ষ। তালিকা প্রস্তুত ও গবেষণায় সহায়তা করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তিনজন গবেষক। শুরুতে তারা হত্যার শিকার হওয়া ৬৫ জনের পরিচয় উদ্ঘাটন করেন।
২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ক্যাডেট কলেজের পাশে স্থানীয় কাকুয়ারপাড় বধ্যভূমিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি উদ্যান, সিলেট নির্মাণকাজ শুরু করেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর ২০২৩ সালের ৪ মার্চ উদ্বোধন করা হয় উদ্যানটি। ওই বছর প্রথমবারের মতো শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পান তাদের স্বজন। পরে আরও ছয়জনের পরিচয় জানার পর তাদের নামও ফলকে আলাদাভাবে লাগানো হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৭১ শহীদের স্বজনরা গত দুই বছর ধরে বধ্যভূমিতে ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ হারানো স্বজনের সেখানে অদৃশ্যে খুঁজে নিয়ে সান্ত্বনা খোঁজেন।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক সাংবাদিক অপুর্ব শর্মা বলেন, শহীদদের পরিচয় উদ্ঘাটন তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। প্রথমে ৬৫ জন ও পরে আরও ছয়জনের পরিচয় মেলে।

