বেনাপোল কাস্টমস কর্মকর্তা সনজুর ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানি: শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানি বন্ধ প্রায়

বেনাপোল কাস্টমস কর্মকর্তা সনজুর ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানি: শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানি বন্ধ প্রায়

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের শুল্কায়ন গ্রুপ-২ (এ)–এর রাজস্ব কর্মকর্তা সনজু মিয়ার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য ও ব্যবসায়ীদের হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তিনি বর্তমান কাস্টমস কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেনের আত্বীয় পরিচয়ে আমদানিকারক প্রতিনিধিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নিয়মিতভাবে ঘুষ আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সনজু মিয়ার ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানির কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বিভিন্ন শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানি প্রায় বন্ধের পথে।

একাধিক ভুক্তভোগীর দাবি,ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের চালান ছাড় নিতে হলে সনজু মিয়ারকে নিয়মিত ঘুষ দিতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিনিধি জানান, শুধু ফাইলে স্বাক্ষর পেতেই দিতে হয় সর্বনিম্ন ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। এছাড়া পণ্য ল্যাবে পরীক্ষার ভয় দেখিয়ে পণ্যের ধরন অনুযায়ী ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্টেশনটিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আমদানিকারক প্রতিনিধিরা সনজু মিয়ার হয়রানির বিষয়টি অনেকেই মুখোমুখি হয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ না দিলে তিনি কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেন না। স্থানীয় প্রতিনিধিদের দাবি- ঘুষের টাকায় তিনি বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন, যা দুদকের তদন্তেই বেরিয়ে আসবে। চাহিদামতো টাকা না দিলে চালান পাঠানো হয় ঢাকার বুয়েটে টেস্টিংয়ের নামেযা সময়ক্ষেপণ ও অতিরিক্ত হয়রানি সৃষ্টি করে। এতে সরকারও বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়,বেনাপোল কাস্টমসের ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে গণমাধ্যমে কেউ অভিযোগ জানাতে চাইলে তার লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয়। কাস্টমস কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেনের আত্বীয় পরিচয়ের কারণে রাজস্ব কর্মকর্তা সনজু মিয়ার বিরুদ্ধে কেউ সহজে মুখ খুলতে সাহস পান না। আর এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে অসাধু এই কর্মকর্তা ব্যবসায়ীদের কাছ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

বেনাপোলের আমদানিকারক দিদারুল ইসলাম বলেন, শুল্কায়ন গ্রুপ-২ (এ)-এর রাজস্ব কর্মকর্তা সনজু মিয়া যোগদানের পর থেকেই চাহিদা মোতাবেক টাকা না পেলে পণ্য টেস্টে পাঠানোর ভয়ভীতি দেখায় এবং ভেলু বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক হয়রানি করছে। তার কাছে যেকোন ফাইল গেলেই ঘুষ ছাড়া ছাড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তার এই ঘুষ বাণিজ্যে সহযোগিতা করেন একই গ্রুপের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাসিব আরিফিন।

অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানিতে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা জানান, এসব কারণে আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর হয়ে পণ্য আনতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন, ফলে বন্দরটির রাজস্ব আদায়েও ধস নেমেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সনজু মিয়া তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
রাজস্ব কর্মকর্তা সনজু মিয়ার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগ না পাওয়ায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর যশোর বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তার ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। এর আগে তার সহযোগী, স্থানীয় এনজিওকর্মী হিসেবে পরিচিত হাসিবুর রহমানকে দুদক আটক করে এবং তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ঘুষের ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। পরে তিনি স্বীকার করেন, ওই টাকা শামীমা আক্তারের জন্যই তিনি বহন করছিলেন। পরবর্তীতে দুদক শামীমা আক্তারকেও আটক করে জেল হাজতে পাঠায়।

Explore More Districts