নদীনালা-খালবিলে ঘেরা ইউনিয়ন: বারো মাসই নৌকায় চড়ে স্কুলে যায় শিক্ষার্থীরা

নদীনালা-খালবিলে ঘেরা ইউনিয়ন: বারো মাসই নৌকায় চড়ে স্কুলে যায় শিক্ষার্থীরা

৬ December ২০২৫ Saturday ১২:০১:২৬ PM

Print this E-mail this


নাজিরপুর ((পিরোজপুর) প্রতিনিধি:

নদীনালা-খালবিলে ঘেরা ইউনিয়ন: বারো মাসই নৌকায় চড়ে স্কুলে যায় শিক্ষার্থীরা

পিরোজপুর জেলা শহরের উত্তরের নিচু জনপদের নাম নাজিরপুর। অসংখ্য নদীনালা-খালবিলে ঘিরে থাকা এই উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়ন। এখানে গ্রাম থেকে বের হওয়ার কোনো সড়ক নেই। কিছু স্থানে কাঠ-বাঁশের সাঁকো থাকলেও তা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। ফলে এ জনপদের শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ডিঙি নৌকা ও ক্ষুদ্রাকৃতির ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কিংবা প্রখর রোদে ছাতা মাথায় দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বছরের বারো মাসই শিক্ষার্থীরা নিজেরা বৈঠা বেয়ে যাতায়াত করে স্কুলে। অধিকাংশ বাড়ির ঘাটেই নিজস্ব মালিকানায় চলাচলের জন্য তৈরি থাকে একেকটি নৌকা বা ট্রলার। আবার বিভিন্ন হাট-বাজার ও দূর-দূরান্তে যাওয়ার জন্য ভাড়ায়চালিত মাঝারি ট্রলারও চলাচল করে। 

দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে ব্যবহার করে ছোট ছোট ডিঙি নৌকা। খালের পাড় ধরে বয়ে গেছে সরু মেঠোপথ। বর্ষা মৌসুমে এসব মেঠোপথ পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। শীত মৌসুমের শেষদিকে মেঠোপথগুলো দিয়ে চলাচল করা গেলেও বাঁকে বাঁকে রয়েছে অগণিত বাঁশের ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো। বিলাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের এমনটাই ধারণা-বিলে রাস্তা পাবে কোথায়। তাই খালই তাদের রাস্তা, নৌকাই তাদের বাহন।

এ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বিলডুমরিয়া গ্রামে ডুমরিয়া নেছারিয়া বালিকা আলিম মাদ্রাসা ও ডুমরিয়া নেছারিয়া বালক আলিম মাদ্রাসা। এ ছাড়া রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য নেই উপযুক্ত সড়কপথ। ফলে চরম দুর্ভোগ নিয়েই চলাচল করতে হয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষদের। পৌষ-মাঘের শীতের সময়ে নদী আর খাল কচুরিপানায় এমনভাবে আটকে থাকে যেখানে নৌকা কিংবা ট্রলারেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার উপায় থাকে না। ফলে যোগাযোগের সংকটের কারণে শুরুতেই ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকে এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীর। 

নৌকায় চলাচলকারী শিক্ষার্থীরা যুগান্তরকে জানায়, ঝুঁকি আর অসহনীয় দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে নৌকায় চড়ে স্কুলে যেতে হয় তাদের। কখনো কখনো বই-খাতা আর স্কুল ড্রেস ভিজে যায়। তা ছাড়া নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারে না। 

ইউনিয়নটির বিলডুমরিয়া গ্রামের আবদুল কাদের শেখ দুঃখ করে বলেন, ‘আমাগো বিলে জন্ম, বিলেই আমাগো মরণ। নৌকা ছাড়া উপায় নাই, নৌকাই এহন আমাগো রাস্তা।’ বিলডুমরিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আয়ুব আলী তালুকদার বলেন, শৈশব থেকে দেখে আসা যাতায়াতের কষ্ট শেষ হয়নি একবিংশ শতাব্দীতে এসেও। বাজার-সদাই থেকে শুরু করে চিকিৎসা, শিক্ষা সবকিছুর জন্যই আমাদের পাড়ি দিতে হয় অথৈ পানি। একমাত্র বাহন হলো ডিঙি নৌকা। এক কথায় আমাদের জীবন নির্ভর করে ছোট্ট এই ডিঙি নৌকার ওপর ভরসা করে। রাতে কোথাও যাওয়ার সুযোগ থাকে না। বিপদ-আপদে আল্লাহই ভরসা। 

সোনাহুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলার প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকা দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীদের নৌকা, ট্রলার ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের মাধ্যমে নেই। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এত সরকার এলো-গেল; এমপি-মন্ত্রী আসে-যায় কিন্তু আমাদের ভাগ্যের আকাশে চাঁদ আর ওঠে না। বারবার প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু তা পালন করেন না তারা। যদি কোনো সরকার এখানে বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করে দেন তাহলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ সার্বিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হবে। দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবে একটি রাস্তা নির্মাণ এখন সময়ের অনিবার্য দাবি। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া শাহনাজ তমা বলেন, যদি সরকারিভাবে প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই এখানে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা-ব্রিজ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক


শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

Explore More Districts