কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে শুরু হয়েছে বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের কাজ। নদীর তীরে অর্ধশত শুঁটকি মহালে চলছে এই মহাযজ্ঞ। কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত এখানকার শুঁটকির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এ কারণে শীত মৌসুম ঘিরে নদীর পাড়ে চলছে শুঁটকি শুকানোর বিশাল কর্মযজ্ঞ। নদীর পারে বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি সারি সারি মাচা। সেখানে ঝুলছে ছুরি, লইট্টা, ফাইস্যা, হাঙরসহ নানা জাতের শুঁটকি। এসব শুঁটকি উৎপাদনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাজারো নারী–পুরুষ।
চট্টগ্রামের ভোজনরসিক মানুষের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় যুক্ত থাকে নানা জাতের শুঁটকি। তাই অন্য সময়ের চেয়ে শীতে শুঁটকির চাহিদা বাড়ে কয়েকগুণ। নদীর দক্ষিণে কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর, চরপাথরঘাটা এলাকায় শুঁটকির ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন কয়েক হাজার মানুষ। প্রতিদিন সূর্যের তাপে এসব এলাকার বিভিন্ন স্পটে ছোট–বড় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছ শুকানো হচ্ছে। কদর বেশি থাকে ছোট জাতের শুঁটকির। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে বড় শুঁটকির চাহিদাও বাড়বে এমন প্রত্যাশা শ্রমিকদের। সরেজমিনে দেখা যায়, ইছানগরের ডায়মন্ড সিমেন্টের নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শুঁটকি পল্লীতে বাঁশ দিয়ে তৈরি মাচায় বড় বড় শুঁটকিগুলো শুকানো হচ্ছে। পাশে সারি সারি মাচানে ছোট জাতের নানা রকমের শুঁটকি শুকাতে দেওয়া হয়েছে। এখানে অনেক শ্রমিক কাজ করছেন। শুঁটকি পল্লীর শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানকার শুঁটকি চাক্তাই, ঢাকা, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশেও রপ্তানি হয়। শুঁটকি উৎপাদনের কাজ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে চলে ৯ মাস। মার্চ পর্যন্ত বেশি শুঁটকি উৎপাদন হয়।
ডায়মন্ড এলাকায় কথা হয় শ্রমিক জাগির হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, শীত যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে কাজের চাপ। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়তি অর্ডার আসায় দম ফেলার ফুরসত নেই আমাদের। যত বেশি কাজ, তত খুশি আমরা। শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকালে শুঁটকির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কর্ণফুলী থেকে উৎপাদন হওয়া শুঁটকি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল আলীম বলেন, চলতি মৌসুমে ৪ হাজার টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কর্ণফুলীতে। ভেজাল ও বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। এখন বলা যায়, কর্ণফুলীতে নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে।



