ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়াল, এখনো নিখোঁজ শত শত মানুষ – DesheBideshe

ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়াল, এখনো নিখোঁজ শত শত মানুষ – DesheBideshe

ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়াল, এখনো নিখোঁজ শত শত মানুষ – DesheBideshe

জাকার্তা, ০২ ডিসেম্বর – ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০০ ছাড়িয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরো অন্তত ৫০০ জন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশগুলোতে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।

দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, মালাক্কা প্রণালিতে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তিন প্রদেশে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ১৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আচেহ, উত্তর সুমাত্রা ও পশ্চিম সুমাত্রা প্রদেশ বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত। হাজারো মানুষ এখন খাদ্য ও জরুরি সরঞ্জাম ছাড়া বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। অঞ্চলগুলোতে পৌঁছাতে পারছেন না সহায়তাকর্মীরা।

আচেহর পিদিয় জয়ার বাসিন্দা আরিনি আমালিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘পানি যেন সুনামির মতো এসেছে। আমার দাদির মতে, তার জীবনে দেখা সবচেয়ে বড় দুর্যোগ এটি।’

বন্যায় বহু সেতু ভেঙে গেছে, ভূমিধসে বন্ধ হয়ে গেছে রাস্তা। বড় যানবাহন চলাচল অসম্ভব হওয়ায় হেঁটে বা মোটরসাইকেলে করে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে পৌঁছাতে হচ্ছে উদ্ধারকর্মীদের। বহু এলাকায় এখনো খাদ্যসামগ্রী পৌঁছায়নি।

পশ্চিম সুমাত্রার বিখ্যাত টুইন ব্রিজ এলাকায় মাটি–কাদার স্তূপ সরাতে কাজ করছে প্রশাসন। সেই এলাকায় নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধানে দাঁড়িয়ে ছিলেন মারিয়ানা। তিনি বলেন, ‘খননযন্ত্রের সাহায্যে যখন সেই ঘন কাদা উঠে আসে, তখনই ভাবি—আমার ছেলে কী অবস্থায় আছে? তাকে আদৌ চিনতে পারব তো?’

উত্তর সুমাত্রার সেন্ট্রাল তাপানুলিতে বসবাসকারী মাইসান্তি বলেন, তিন দিন ধরে তাদের কাছে খাবার নেই। তিনি বলেন, ‘এমন অবস্থা যে ইনস্ট্যান্ট নুডলস নিয়েও ঝগড়া হচ্ছে।

আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি—খাবার নেই, পানি নেই।’ ইন্টারনেট ও ফোনসেবাও বিচ্ছিন্ন। অনেকে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে নেটওয়ার্কের সিগন্যাল খুঁজছেন।

সেন্ট্রাল আচেহতে রোববার রাতে হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে স্টারলিংক ডিভাইস দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।

উদ্ধারকাজ চললেও সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। অনেকেই বলছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় খাদ্য সহায়তা বিলম্বিত হয়েছে।

সোমবার উত্তর সুমাত্রার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো স্বীকার করেন, বহু রাস্তা এখনো বিচ্ছিন্ন। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমাদের জাতি দৃঢ়চেতা, আমরা এই সংকট পার হয়ে যাব।’

শুধু ইন্দোনেশিয়াই নয়, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকাসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে গত এক সপ্তাহে বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা প্রায় ১১০০। শ্রীলংকায় ৩৫৫ জন এবং থাইল্যান্ডে ১৭৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

একক কোনো দুর্যোগ নয়, বরং উত্তর–পূর্ব মৌসুমী বায়ু, ঘূর্ণিঝড় এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতার সম্মিলিত প্রভাবে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি ওয়েদার।

শ্রীলঙ্কায় বৃষ্টিপাত বাড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় দিতওয়া, আর মালয় উপদ্বীপ–সুমাত্রা অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার প্রভাবে এক মিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বিষুবরেখার এত কাছাকাছি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভিয়েতনামেও কয়েক সপ্তাহ ধরে অতিবৃষ্টি চলছে। টাইফুন কোটোর প্রভাবে সেখানে আরো ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ
এনএন/ ০২ ডিসেম্বর ২০২৫



Explore More Districts