শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ, আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ, চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ ও আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ। এর মধ্যে ১ নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি (সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা) প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। দ্বিতীয় অভিযোগসহ মোট তিনটি অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম রায় বিচারপ্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায়ই চূড়ান্ত নয়। বাদী-বিবাদীপক্ষের উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ রয়েছে। আপিল বিভাগে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। এ মামলার দুই আসামিই পলাতক ও ভারতে অবস্থান করছেন। রায় ঘোষণার পর অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে হস্তান্তরের জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায়কে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ডাকা কর্মসূচি ঘিরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাসে আগুন, চোরাগোপ্তা ককটেল বিস্ফোরণ, ব্যাংকে আগুন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পেট্রলবোমা, গাছ কেটে সড়ক অবরোধসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জননিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। রায় ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবশ্যই সজাগ ও কঠোর হতে হবে।
ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতেই শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো ও দলীয় নেতা-কর্মীদের আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে আইনবহির্ভূত বলপ্রয়োগের কাজে ব্যবহার করেছিলেন। পরপর তিনটি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে যে চরম অগণতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী শাসন তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটাই এই মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্র রচনা করেছিল। এই রায় নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি বড় শিক্ষা। যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছেন বা ভবিষ্যতে যাবেন, তাঁদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন।
