দৈনিককুষ্টিয়া অনলাইন/
পাটুরিয়া ফেরিঘাটের পাঁচটি ঘাটের মধ্যে বর্তমানে মাত্র একটি সম্পূর্ণ সচল রয়েছে। বাকি চারটি ঘাট—পদ্মার অব্যাহত ভাঙন, পন্টুনের ত্রুটি ও সংযোগ সড়ক ধসে পড়ায়—আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে আছে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ সড়ক ও নৌপথে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
নৌপথের সংকট—পাঁচ ঘাটের চারটিই অচল/
২০০২ সালে আরিচা থেকে স্থানান্তরের পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রধান ভরসাস্থল হয়ে ওঠে। পাটুরিয়া অংশে পাঁচটি ফেরিঘাট থাকলেও বর্তমানে দুটি ঘাট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ; বাকি তিনটির মধ্যে ২ ও ৪ নম্বর ঘাট আংশিক সচল এবং সম্পূর্ণ কার্যকর আছে শুধু ৩ নম্বর ঘাট।
আগস্টে পদ্মার তীব্র স্রোতে সব ঘাটই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন পন্টুনগুলোকে ওপরের লেভেলে সরিয়ে রাখা হয়। পরে পানির স্তর দ্রুত নেমে গেলে সেগুলো আর নিচে নামানো সম্ভব হয়নি—কারণ নিচের সংযোগ সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এবং পন্টুনের তলায় ৩০-৪০ ফুট গভীর খাদ তৈরি হয়েছে।
এই কারণে চারটি ঘাটে পন্টুন স্থাপনই করা যাচ্ছে না।
সাইট পরিদর্শনে দেখা গেছে— ১ ও ৫ নম্বর ঘাট সম্পূর্ণ অচল। ২ নম্বর ঘাটে পন্টুন ও সংযোগ সড়কের মাঝে বড় ফাঁক থাকায় ফেরি ভেড়ানো কঠিন। ৪ নম্বর ঘাটে লো-ওয়াটার লেবেলের সামনের অংশ ভাঙা; ভারী যানবাহন আটকে যাচ্ছে। ৩ নম্বর ঘাটে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন ওঠানামা করছে।
বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন,
“বরাদ্দ পেলে সম্পূর্ণ সংস্কার শুরু হবে। আপাতত ৩ ও ৪ নম্বর ঘাটে সাময়িক সংস্কারের কাজ চলছে।”
অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আবদুস সালাম জানিয়েছেন, ঘাট অচল থাকায় ফেরিতে যানবাহন কমে গেছে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও হ্রাস পেয়েছে। বিআইডব্লিউটিএকে দ্রুত সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে কয়েক দফা চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কে ছোট-বড় গর্ত—যাত্রা দ্বিগুণ সময়/
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রীর চাপ কমে গেলেও ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর–মাদারীপুর অংশের বেহাল অবস্থা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।
বরিশাল থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়কের পিচ-পাথর উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সাময়িক চলাচল নিশ্চিত করতে ইট-বালি দিয়ে খানাখন্দ ভরাট করে ওপর দিয়ে দেওয়া হচ্ছে পাতলা পিচের প্রলেপ।
ধীরগতিতে যানবাহন চলাচলের কারণে সময় লাগছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। ফলে যাত্রীরা একইসঙ্গে নৌপথ ও সড়ক—উভয়পথেই ভোগান্তির শিকার।
যানবাহন চালকদের অভিযোগ/
চালকরা জানান,
ঘাট কম সচল থাকায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে
ফেরিতে ওঠানামা ঝুঁকিপূর্ণ/
আংশিক সচল ঘাটগুলোতে যানবাহন আটকে পড়ায় আরও দেরি হয়
প্রকল্প থেমে যাওয়ার প্রভাব/
পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া এলাকায় নদীশাসন ও ঘাট সংস্কারের উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালে একটি প্রকল্প নেওয়া হলেও ২০২৩ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে ঘাটগুলোর অবস্থার আরও অবনতি হয়।


