বই জ্ঞানের শক্তি অনেক বাড়িয়ে দেয় : আজাদী সম্পাদক – দৈনিক আজাদী

বই জ্ঞানের শক্তি অনেক বাড়িয়ে দেয় : আজাদী সম্পাদক – দৈনিক আজাদী

বই জানার এবং জ্ঞানের শক্তি অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়’ মন্তব্য করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, বই পড়তে হবে। বই না পড়লে আমরা অনেক কিছু জানা থেকে বঞ্চিত হব। আমরা যত বেশি বই পড়ব তত বেশি জ্ঞানী হব এবং আমাদের জানার পরিধি তত বাড়বে। পৃথিবীকে জানার জন্য এবং সমসাময়িক বিষয়কে জানার জন্য বই পড়তে হবে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনে ক্লাব কলেজিয়েট চিটাগং মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যাংকার মহব্বত খানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘চলার পথে যা দেখেছি’এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ক্লাব কলেজিয়েটের চেয়ারম্যান ও কথাসাহিত্যিক মোহীত উল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন থাইল্যান্ডের অনারারি কনসাল জেনালের আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, দৈনিক কর্ণফুলীর সম্পাদক আলহাজ্ব আফসার উদ্দিন চৌধুরী ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন ‘চলার পথে যা দেখেছি’এর লেখক মহব্বত খান।

একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেন, রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক এবং বাংলা মিলিয়ে এক ধরনের ভাষায় কথা বলে। তাই আমার ধারণা ছিল, ওরা নিশ্চয়ই চট্টগ্রাম থেকে ওখানে গিয়ে বসবাস করছে আর বার্মিজরা তাদের পিটিয়ে এদিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমার সে ধারণা পাল্টে যায় অমর্ত্য সেনের বই পড়ে। অমর্ত্য সেনের বই পড়ে জানতে পারলাম রোহিঙ্গারা উদ্বাস্তু নয়, চট্টগ্রাম থেকেও তারা যায়নি। সেটা তাদের স্বভূমি। ব্রিটিশরা যখন বার্মা ছেড়ে যায় তখন রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল বার্মাকে দিয়ে যায়। এই যে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে আছে তা অমর্ত্য সেনের বই না পড়লে জানতে পারতাম না। সুতরাং বুঝতে পারছেন, বই না পড়লে জানতে পারব না। তাই জানতে হলে বই পড়তে হবে।

তিনি বলেন, সত্যজিৎ রায় তার ‘হীরক রাজার দেশে’এ খুব সুন্দর কথা বলেছেন, ‘জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই’। আসলে এটা রূপক। কারণ জানার যখন শেষ নেই তাই আমাদের জানতে হবে।

শিক্ষাবিদ মোহীত উল আলম বলেন, মানুষ আত্মজীবনী কেন লেখে? মানুষ আত্মজীবনী লিখতে গেলে তো অনেক বিপদ আছে। একজন বিখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ বলেছেন, যে আত্মজীবনী কখনো লেখা যায় না। ইটস ভেরি ডিফিকাল্ট। কেন? জিনিসটা এভাবে বলি। আয়নাতে নিজেকে নানাভাবে দেখা যায়। উপর থেকে দেখবেন না নিচে থেকে দেখবেন, নাকি সাইড থেকে দেখবেন। আয়নার কথা বাদ দিয়ে আমরা যদি সেলফির কথা ধরি, সেলফিটা আপনি কোন এঙ্গেল থেকে নিবেন? এখন মহব্বত খান তার আত্মজীবনীটা কোন এঙ্গেল থেকে লিখেছেন সেটা আমাদের জন্য একটা কৌতূহলের ব্যাপার।

তিনি বলেন, মহব্বত খান চট্টগ্রামের একটি বিশিষ্ট পরিবারের সন্তান। গ্রন্থে সেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। তখন আমার মনে হলো, আমরা যখন পতেঙ্গার সমুদ্র সৈকতে যাই, আমরা সমুদ্রটা দেখি, ঢেউ আসছে ইত্যাদি দেখি। কিন্তু এটার তলায়ও অনেক রহস্য আছে, অনেক বিচিত্রতা আছে। তো মহব্বত খানের নিজের জীবনকে দেখার ব্যাপারে আমার মনে হয়েছে, উপর থেকে একটা শান্ত সমুদ্র দেখার যে প্রবণতা সেটা এসেছে। কিন্তু ভিতরের ঘটনাগুলোর মধ্যে বিশ্লেষণটা একটু কম এসেছে।

তিনি বলেন, মহব্বত খান ব্যাংকার ছিলেন। উনি এক জায়গায় লিখেছেন, ব্যাংকের জন্য তিনটা জিনিস দরকার; আইন, সেটা পালন ও কমনসেন্স। এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। কারণ বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে দুরূহ ব্যাপার ব্যাংকিংয়ের ব্যাপারটা। হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে। কীভাবে যাচ্ছে? এটা নিয়ে একটা কেস তিনি তুলে ধরেছেন। অ্যাকাউন্টস কুকিং করে তখনকার দিনে দেড় লক্ষ টাকা সরিয়ে দুজন জেলে গেছে। মহব্বত খান এ ধরনের বিপর্যয় থেকে নিজেকে যে রক্ষা করে এসেছেন, এটার জন্য তাকে কিন্তু একটা ধন্যবাদ জানাতে হয়।

মোহীত উল আলম আলম বলেন, বলা হয়, প্রত্যেকটা সফল পুরুষের পেছনে একজন নারীর অবদান থাকে। এ কথাটা নারীরা বলে নাই, এ কথাটা পুরুষেরা বলেছে। কেন বলেছে? পুরুষেরা বলতে চেয়েছে, নারী তুমি আর কিছু করিও না, তোমার ভূমিকা হচ্ছে পুরুষকে প্রণোদনা দেওয়া। তার মানে নারীর যে নারীত্ব, নারীর যে স্বাধীনতা সেটা হরণ করে নেওয়া হয়েছে। আর আমাদের নারীরা এটাতে খুব খুশি। এই যে বলে না, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে; এটাও যে একটা পুরুষতান্ত্রিক ট্র্যাক, সেটা আমরা খেয়াল করি না। এই যে সমাজ, এটা ভাঙতে গেলে মহব্বত খানদের আরো জোরালো ভূমিকায় আসতে হবে। সত্যকে সত্যের মধ্য দিয়ে আঘাত করতে হবে। এখন যেটা হয়েছে, কনভেনশনাল কথাগুলোকে আমি গ্রহণ করে নিলাম, সেটা আমি পরের প্রজন্মকে দিলাম, তার পরের প্রজন্মকে দিলাম। এটা টেলিফোন ডিরেক্টরের মতো কাজ করবে।

আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় থেকে মহব্বত খানকে চিনি। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সমিতি করার পর রিইউনিয়ন করার জন্য ঢাকায় দায়িত্ব নেওয়ার জন্য খুঁজছিলাম। তখন দুজনকে পাই। যার একজন মহব্বত খান। তার ব্যাংক ছিল আমাদের অফিস। পুনর্মিলনীর জন্য ঢাকায় রেজিস্ট্রেশনের বিষয়গুলো দায়িত্ব নিয়ে করেছেন। কলেজিয়েট স্কুলের ব্যাপারে মহব্বত খান তার গ্রন্থে অনেক কিছু লিখেছেন। বিশেষ করে শিক্ষক ও তার সহপাঠীদের ব্যাপারে, যা পাঠ করলে স্মৃতিকাতর হতে হয়।

আলহাজ্ব আফসার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং জীবনে মহব্বত খান সাফল্য পেয়েছেন। পারিবারিক জীবনেও সফল, যা তুলে ধরেছেন ‘চলার পথে যা দেখেছি’ গ্রন্থে। ব্যাংকিং জীবনে তার সাফল্যের যে অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তা নিঃসন্দেহে ব্যাংকিং পেশার পাঠকদের আকর্ষণ করবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘চলার পথে যা দেখেছি’ গ্রন্থে চট্টগ্রামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়। কালুরঘাইট্টে মুড়ির টিনের কথাও বাদ যায়নি। লেখক সমসাময়িক অনেক ঘটনা সরল ও সততার সঙ্গে চিত্রিত করেছেন, যা পাঠকদের জ্ঞান ও ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

মহব্বত খান নিজের লেখালেখির শুরুর গল্প তুলে ধরে বলেন, আমি লেখক ছিলাম না। চাকরি করতাম। সেখানে ব্যস্ততার মধ্যে লেখার জন্য সময় বের করা কঠিন। ২০১০ সালে কলেজিয়েট স্কুলের পুনর্মিলনী উপলক্ষে প্রকাশিত একটি স্মারকের জন্য প্রয়াত মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু লেখা চান। তার জোরাজুরিতে লিখলাম। পরবর্তীতে ২০১১ ও ২০১৬ সালেও কলেজিয়েট স্কুলের আরো দুটি পুনর্মিলনী স্মারকে লিখলাম। তিনি বলেন, লিখতে গিয়ে কেউ আঘাত পাচ্ছে কিনা, আবার সততা বজায় থাকে কিনা সে বিষয়ে সজাগ ছিলাম।

দিলরুবা খানমের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, রাজনীতিবিদ আবদুল্লাহ মহিউদ্দিন, ব্যাংকার মোহাম্মদ রোসাংগীর, কবি আশীষ সেন, ক্রীড়া লেখক সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম, সমাজসেবক আনোয়ারুল আজিম মিনু, ফয়জুল মতিন, মুসা খান, লেখকের সন্তান তানভীর আজিজ খান ও কালধারার কর্ণধার নাফিস সাদেকিন। কোরান তেলাওয়াত করেন সালামত উল্লাহ।

Explore More Districts