শীতের কুয়াশা নামতেই বাঙালির রান্নাঘরে জেগে উঠেছে পিঠা-পুলির মিষ্টি সুবাস। গ্রাম থেকে শহর—সর্বত্রই চলছে ঐতিহ্যবাহী শীতকালীন পিঠা তৈরির ধুম। ভাপা, পাটিসাপটা, চিতই, পুলি, নকশি—এই নামগুলো শুধু খাবারের নাম নয়, বাঙালি সংস্কৃতির জীবন্ত প্রতীক।
শীত এলে পিঠা ছাড়া উৎসব যেন অসম্পূর্ণ। সকালের হিমেল হাওয়ায় যখন গুড়ের গন্ধ ভেসে আসে, তখন পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হন রান্নাঘরে। মা-দাদির হাতের ছোঁয়ায় তৈরি পিঠা শুধু পেট ভরায় না, মনকেও আনন্দে ভরিয়ে দেয়।
সবচেয়ে প্রিয় ভাপা পিঠা
চালের গুঁড়ো, গুড় আর নারকেলের মিশ্রণে তৈরি ভাপা পিঠা শীতের সকালের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভাপে সেদ্ধ গরমাগরম পিঠা মুখে দিলেই শীতের ঠান্ডা যেন গলে যায়। গ্রামের অনেকে এতে খেজুরের গুড় ও তালের পাটালি মিশিয়ে স্বাদকে আরও সমৃদ্ধ করছেন।
শীতের রানি পাটিসাপটা
পাতলা চালের খোলে ক্ষীর-নারকেলের পুর ভরে তাওয়ায় হালকা সেঁকা পাটিসাপটা যেন শীতের রানি। গ্রামের মেয়েরা এখনো হাতে তৈরি করছেন এই পিঠা। দেখতে যেমন মনোরম, খেতেও তেমনি লোভনীয়।
সাধারণ কিন্তু অতুলনীয় চিতই
চালের গুঁড়োর সাধারণ চিতই পিঠা গুড়, ভর্তা কিংবা দুধে চুবিয়ে খাওয়া হয়। আর দুধচিতই তো বিলাসিতার চূড়ান্ত! মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়।
পুলি ও নকশি—শিল্পের ছোঁয়া
নারকেল-গুড়ের পুরে ভরা পুলি পিঠা দুধে রান্না করে খাওয়ার আনন্দই আলাদা। আর নকশি পিঠা? চালের গুঁড়োর কারুকাজে ফুল, পাখি, জ্যামিতিক নকশা—এ যেন খাবারের শিল্পকর্ম। গ্রামীণ মেলায় এখনো নকশি পিঠার প্রদর্শনী পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
শিশুদের প্রিয় মালপোয়া
চালের গুঁড়ো, ময়দা ও কলার মিশ্রণে তৈরি মালপোয়া তেলে ভেজে গুড়ের রসে চুবিয়ে খাওয়া হয়। শিশু থেকে বুড়ো সবারই প্রিয়।
শীতের এই পিঠা উৎসব শুধু খাবারের নয়, বাঙালির মিলনের, আনন্দের, ঐতিহ্যের উৎসব।
শেয়ার করুন

