
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে শুরু হয়েছে নির্বাচনী হাওয়া বসে নেই দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীরা সকাল সন্ধ্যা ইতিমধ্যেই ছুটে চলেছেন শহর থেকে গ্রামে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি । করছেন নিজ থেকে রাস্তা উন্নয়ন ‘ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ‘মসজিদ -মাদ্রাসা ‘স্কুল-কলেজ মন্দিরে অনুদান লক্ষ্য একটায় ফেব্রুয়ারীতে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া ।এই নিয়ে সাধারণ মানুষ ও বেশ হাস্যরসে করছেন ব্যাপক আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা ও ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি। তবে দুই উপজেলার জনপদে আওয়ামী লীগ এর একসময় ঘাটি ছিলো ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে থাকা বিএনপিব-জামায়াত প্রবাসী নেতা কর্মীরা এখন সরব নির্বাচনী আলাপ-আলোচনায়। চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে বাজার, হাট, মসজিদ কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবখানেই এখন একটাই প্রশ্ন, “কাকে চায় জনগণ?”
এই আসনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন আলোচিত প্রার্থী—বিএনপি, জামায়াত, গণ অধিকার পরিষদ এবং জমিয়তে উলামা ইসলাম বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থীরা। প্রত্যেকেই নিজ নিজ রাজনৈতিক মতাদর্শ, জনপ্রিয়তা ও সংগঠনিক শক্তির ওপর ভর করে ভোটারদের মন জয় করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
বিএনপি প্রার্থী এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী
সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী। গোলাপগঞ্জের কৃতি সন্তান এমরান আহমদ দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছেন। তৃণমূল পর্যায়ে তার দৃঢ় সংগঠন, সহজ-সরল আচরণ ও দলের প্রতি অবিচল আনুগত্য তাঁকে কর্মী-সমর্থকদের মাঝে জনপ্রিয় করেছে।
মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই তিনি গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন ইউনিয়নে গণসংযোগ, পথসভা ও মতবিনিময় চালিয়ে যাচ্ছেন। তার অঙ্গীকার—“জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং অবহেলিত গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়া।”
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বিয়ানীবাজারের পরিচিত মুখ। দলীয় রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সমাজসেবা ও শিক্ষাক্ষেত্রেও সক্রিয়। তার নেতৃত্বে এলাকার ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিকশিত হচ্ছে। জামায়াতের সংগঠিত ভোটব্যাংক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী একাংশের ভোটারদের সমর্থন তার বড় শক্তি হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থী এডভোকেট জাহিদুর রহমান
তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন গণ অধিকার পরিষদের মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট জাহিদুর রহমান। তার রাজনৈতিক আদর্শ গণমানুষের অধিকার ও পরিবর্তনের রাজনীতি। এলাকাজুড়ে তিনি “তরুণদের কণ্ঠস্বর” হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, “আমরা দলীয় রাজনীতি নয়, জনগণের রাজনীতি করতে চাই। দেশের রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।” তার প্রচারণায় তরুণ ভোটারদের সাড়া ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
জমিয়তে উলামা ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী হাফিজ ফখরুল ইসলাম
জমিয়তে উলামা ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী হাফিজ ফখরুল ইসলামও এখন মাঠে সরব। ইসলামী চিন্তাধারার ধারক হিসেবে তিনি ধর্মপ্রাণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। স্থানীয় মসজিদ-মাদরাসা, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
জনগণের রায় কোন দিকে?
চার প্রার্থীই মাঠে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালালেও ভোটারদের সিদ্ধান্ত এখনো পরিষ্কার নয়। কেউ বলছেন, বিএনপি প্রার্থী এমরান আহমদ চৌধুরীর জনপ্রিয়তা বেশি; আবার কেউ মনে করেন, জামায়াতের সেলিম উদ্দিনের রয়েছে শক্ত ভিত্তি। অন্যদিকে তরুণ ভোটারদের মধ্যে জাহিদুর রহমানের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে, আর ধর্মীয় ভোটারদের একটি অংশ ফখরুল ইসলামের পক্ষে যেতে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের এই আসনে প্রার্থীদের যোগ্যতা, ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনাই নির্ধারণ করবে কে হবেন আগামী দিনের সংসদ সদস্য।
সিলেট-৬ আসনে এখন উত্তেজনা তুঙ্গে। রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে নেমেছে কর্মী-সমর্থক নিয়ে, আর ভোটাররা অপেক্ষা করছেন একটি শান্তিপূর্ণ, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের।

