একুশ বছরে প্রদীপ নিভে যাওয়া দীপঙ্কর দীপের জন্য কাঁদছে সিলেট

একুশ বছরে প্রদীপ নিভে যাওয়া দীপঙ্কর দীপের জন্য কাঁদছে সিলেট

একুশ বছরে প্রদীপ নিভে যাওয়া দীপঙ্কর দীপের জন্য কাঁদছে সিলেট

মাত্র ২১ বছরের এক তরুণ। এই বয়সেই অর্জন করেছিলেন অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা। সামনে ছিলো উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি। নিজের ভবিষ্যতকে আরও উজ্জ্বল করতে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। কিন্তু বিধিবাম। আচমকা নিভে গেলো প্রদীপ।

সিলেটের জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর দীপঙ্কর দীপ বুধবার ভোরে মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

দীপের এই আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। তার বন্ধু-স্বজন তো বটেই, পুরো সিলেটজুড়েই দীপের জন্য চলছে হাহাকার। ফেসবুকে দীপের ছবি দিয়ে আর্তনাদ করছেন অনেকে। দীপের মৃত্যু সংবাদ যেনো রীতিমত ঝড় বইয়ে দিয়েছে তার অনুরাগীদের মধ্যে।

নগরের গোপালটিলায় দীপদের বাসায়ও ভীড় করছেন তার বন্ধু-স্বজনদের অনেকে। আর ছেলেকে হারিয়ে তো তার মায়ের আর্তনাদ থামছে না কিছুতেই।

দীপের ছবি যুক্ত করে ফেসবুতে সঙ্গীতশিল্পী সংস্কৃতিক সংগঠক গৌতম চক্রবর্তী লিখেছেন-

‘ছেলেটার সাথে আমার পরিচয় নেই, কোনোদিন কোনো কথাবার্তাও হয়নি, মধ্যে মধ্যে প্রীতি, শ্রুতি ওরা ওর কিছু ভিডিও দেখাতো মোবাইলে, সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় একদম সহজ সরলভাবে অনেক কিছু উপস্থাপন করে নিতো! সবকিছু মিলিয়ে বলা যায় ছেলেটা অনেক মেধাবী ছিলো….এবং অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো সবার কাছে..

আজ(১২-১০-২০২৫) ফেইসবুক খোলার সাথে সাথে ওর ছবি দিয়ে পোস্ট দেখলাম ছেলেটা নাকি পরপারে পাড়ি দিয়েছে! বিশ্বাস করতে পারছিলাম না! তারপর যখন ধারাবাহিক ভাবে পোস্ট দেয়া শুরু হলো, তখন মানতে বাধ্য হলাম,,, সত্যি সত্যি দীপংকর দ্বীপ ( বয়স ২১-২২) নামের ছেলেটা আর বেঁচে নেই! মাত্র একমাস হলো মায়ের কুল ছেড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য মালেশিয়াতে গিয়েছিলো দ্বীপ।সেই মায়ের অবস্থা চিন্তা করে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে,কি করে তার নাড়ি ছেঁড়া ধন,আদরের দ্বীপের মৃত্যু তিনি মেনে নিবেন! হে পরম করুনাময়, এটা তোমার কি খেলা! এতো অল্প বয়সে ছেলেটাকে পরপারে পাঠিয়ে দিলে!
পরপারে ভালো থেকো দ্বীপ,
আর তো কিছু বলার ভাষাও নেই!’

দীপের মৃত্যু কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না দীপিকা চক্রবর্তী। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন-

‘আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি ।
কোন সোর্স কেই নির্ভরযোগ্য মনে হচ্ছেনা ।
ছেলেটা সরল এবং খুব হাসিখুশি ।
হে ভগবান , এটা গুজব হোক । তার পেইজ থেকে একটা পোস্ট আসুক , “আরে আমি প্র্যাংক করছিলাম, আর সবে ভাবছইন সত্যি ! ”
Dipankar Das Dip প্লিজ , এটা মিথ্যে , তাইনা ?’

‘নাটের গুরু’ নামের সিলেটের আরেকটি জনপ্রিয় ফেসবুক পেজ থেকে দীপের ছবি যুক্ত করে লেখা হয়েছে-
‘পরপারে ভালা থাকিস ভাই আমার..????
দীপ আর আমাদের মাঝে নাই, কিসের এতো তাড়া ছিলো ভাই,
কতো কিছু প্ল্যান করে রেখেছিলি,জানুয়ারিতে দেশে আসবি।
হার্ট অ্যাটাক করে নিমিষেই চলে গেলি!
ভেতর টা ফেটে যাচ্ছে রে ভাই, বিশ্বাস করতে পারছি না কেনো?
জীবন টা এতো অনিশ্চিত কেনো ঈশ্বর?
নিয়ে গেলেন আপনার কাছে?
তার আত্মার সদগতি কামনা করি,আর পরিবার কে ধৈর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা দেন ঈশ্বর..????????’

সিলেটের আলোকচিত্রী বাপ্পী ত্রিবেদী লিখেছেন- অদ্ভুত সময়, মানুষের ফেসবুকের স্টোরি এক্সপেয়ার হওয়ার আগেই মানুষ এক্সপেয়ার হয়ে যায়। অপারে ভালো থাকো দ্বীপ, এতো কিসের তাড়া ছিল?
RIP – Dipankar Dip’

সিলেটের নাটকের জনপ্রিয় অভেনেতা বেলাল আহমদ মুরাদ ফেসবুকে লিখেছেন-
সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর Dipankar Das Dip আর নেই। মালয়েশিয়ায় একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। কিছুদিন আগে উচ্চশিক্ষার জন্য সে মালয়েশিয়া গিয়েছিলো।
লিখে বুঝাতে পারবো না দীপের জন্য কতটা ভালোবাসা স্নেহ, লিখার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছি।
সেদিন দীপ যখন আমাকে এসে বলে ভাই আমি মালয়েশিয়া চলে যাবো সেখানে পড়ালেখা করবে সে। আমি বলছিলাম এই খবর বা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যদি তুমি আমাকে বলতা তাহলে আমি বলতাম আরো এক দেড় বছর পরে এই সিদ্ধান্ত নাও, বলছিলাম অন্য কিছু কারনে। বেশি মিস করছিলো সে দেশ এবং তার পরিবারকে। খুবই ভালো মনের অমায়িক অত্যান্ত ভদ্র মানুষ ছিলো প্রিয় দীপ। আমাকে অন্যরকম শ্রদ্ধা করতো ফোন দিলেই বলতো ভাই মালয়েশিয়া কবে আসবেন আপনাকে দেখবো থাকার জন্য কোন ভাবে হোটেল বুকিং দিবেন না আমি অনেক বড় বাসা নিয়েছি।আমাকে আইডল ডাকতো সে ???? তার ভদ্রতা আমাকে বেশি মুগ্ধ করেছে।
তাকে অনেক মিস করবো।’

সঙ্গীতশিল্পী দিব্যানি দাস মিতালি ফেসবুকে লিখেছেন-
‘এটা কি শুনলাম রে ভাই দিপঙ্কর??? দীপ মারা গেছে এটাও শুনতে হলো!?
কতটা সংক্ষিপ্ত মানুষের জীবন!
মানুষের এমন অবাস্তবিক খবর কি মেনে নেয়া যায়!?আমি লিখতে পারতেছি না,,, এমন খবর ঘুম থেকে উঠার আগেই শুনলাম।’

দ্বীপের পরিবার সিলেটের গোপালটিলায় থাকেন। তাদের মূল বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবলের পুটিজুড়িতে । তার বাবা দিব্যোজ্যোতি দাস। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় দ্বীপ।

দ্বীপের স্বজনরা জানান, মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে দিবাগত রাতে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে আজ ভোর ৫ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দ্বীপ।

দ্বীপদের প্রতিবেশি গোপালটিলার বাসিন্দা কবি পুলিন রায় বলেন, মৃত্যুর খবর শুনে সকালে তাদের বাসায় গিয়েছিলাম। তার বাবা-মা খুব কান্না করছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মালয়েশিয়াতে দ্বীপের মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

দ্বীপ ফেসবুকে পারিবারিক বিভিন্ন ইস্যুতে হাস্যরসাত্মক কনটেন্ট তৈরি করতেন। তাতে দ্বীপের সাথে তার মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও অংশ নিতে দেখা যেতো। হাস্যরসাত্মক এসব ভিডিও করে জনপ্রিয়তা পান তিনি।

Explore More Districts