লড়াই এশিয়া বনাম যুক্তরাষ্ট্রের
বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নের চিত্রে অঞ্চলভেদে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি ও বিনিয়োগের ধারা দেখা যাচ্ছে, যা ২০৩০ সাল পর্যন্ত এআইয়ের গতিপথ নির্ধারণ করবে। প্রযুক্তিগত অগ্রাধিকারের প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন অঞ্চলে সুস্পষ্ট নেতৃত্ব ও কৌশল গড়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এআইয়ের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এআই ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০১৮ সালে চীনকে পেছনে ফেলার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
এই নেতৃত্ব সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায় বেসরকারি বিনিয়োগে, যেখানে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এআই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭২০ কোটি ডলার, আর চীনে ছিল ৭৮০ কোটি ডলার। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্র ৬১টি গুরুত্বপূর্ণ মেশিন লার্নিং মডেল তৈরি করেছে, যা চীনের ১৫টির তুলনায় অনেক বেশি।
তবু চীন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগামী। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশটি ৪৪ হাজারের বেশি এআই পেটেন্ট অনুমোদন করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ হাজারের প্রায় তিন গুণ।
বৃহত্তর আঞ্চলিক চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কে কী বলছেন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এ খাতের উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা নতুন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, এই ভবিষ্যৎ এখনো বহু দূরে, আবার কারও কাছে তা যেন একেবারে দোরগোড়ায়। এআইয়ের সবচেয়ে পরিচিত নাম ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান সম্প্রতি বলেছেন, মানুষ এআইয়ের সঙ্গে ক্রমেই বেশি ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলছে এবং এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গভীর হবে।
এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং বলেন, ‘আমরা এখনো এআই বিপ্লবের শুরুতেই আছি।’ তাঁর মতে, এআই মানুষের কাজের ধরন পাল্টে দেবে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে এবং নতুন নতুন ধারণা অনুসন্ধানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
মেটার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের মতে, সুপারইন্টেলিজেন্স এখন নাগালের মধ্যে বা দোরগোড়ায়। তাঁর ভাষায়, ‘এআই আমাদের বিদ্যমান প্রতিটি ব্যবস্থাকে উন্নত করবে এবং এমন সবকিছু তৈরি করবে, যা আজ কল্পনাতেও নেই।’
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এআইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। তিনি মনে করেন, এটি এমন এক যুগ নিয়ে আসবে, যেখানে মানুষ কম কাজ করবে, আর রোবট ও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ভার বহন করবে।
অ্যানথ্রপিকের প্রধান নির্বাহী ডারিও আমোডেই মনে করেন, হোয়াইট-কলার বা অফিসভিত্তিক চাকরিজীবীদের এখন থেকেই সতর্ক হওয়া উচিত। তিনি বলেন, এআই আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই প্রায় অর্ধেক এন্ট্রি-লেভেল চাকরি প্রতিস্থাপন করতে পারে এবং ১০-২০ শতাংশ বেকারত্ব তৈরি হতে পারে।
তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন ভিন্নমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বোঝা যায়, এটি একদিকে বিপ্লবের প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে অনিশ্চয়তার এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন, কোয়ার্টজ ম্যাগাজিন, নেটগুরু, টেকনোলজি ম্যাগাজিন

