| ২৯ October ২০২৫ Wednesday ৯:০৪:৩৭ PM | |
পিরোজপুর প্রতিনিধি:

দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরের খ্যাতি রয়েছে পেয়ারা উৎপাদনে। পেয়ারার মৌসুমজুড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা আসেন এই জনপদে। তবে পেয়ারার মৌসুম শেষ হতে না হতেই আমড়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন কৃষক, ব্যাপারী ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। কেননা আমড়া উৎপাদনেও শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে পিরোজপুরে।
জেলার ভান্ডারিয়া, কাউখালী, মঠবাড়িয়া ও নেছারাবাদে আমড়া উৎপাদন বেড়েছে। তবে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় নেছারাবাদ উপজেলায়। আকারে বড় ও স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় পিরোজপুরের আমড়ার চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের আলো-বাতাসে পাকা আমড়া সবুজ খোসা ছাড়িয়ে যখন তামাটে রং ধারণ করে, তখনই খালজুড়ে শুরু হয় আমড়া তোলা, বাছাই, বোঝাই ও পাইকারি বাজারে শ্রমিকদের ব্যস্ততা। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত খালে নৌকাভর্তি আমড়া নিয়ে ভিড় জমে পাইকারি হাটে। দরদাম, পরিবহন আর লেনদেনের ব্যস্ততায় এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে জেলার নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানার পাইকারি মোকামগুলো।
উপজেলার ভরতকাঠী, আটঘর, কুড়িয়ানা, গুয়ারেখা, জলাবাড়ী, দৈহারী, বলদিয়া, সমুদয়কাঠী, সারেংকাঠী, সোহাগদলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকায় করে সকাল সকাল নিয়ে আসা হয় সুমিষ্ট আমড়া। জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকেও এখানে আমড়া নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ২-৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে আমড়া। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন চাষি ও খুচরা ব্যক্তিদের কাছ থেকে আমড়া কিনে সড়ক পথে চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেন।
কৃষকরা বলছেন, পেয়ারায় আগের মতো লাভ হয় না। এজন্য গত এক দশকে তারা ব্যাপকভাবে আমড়া চাষে ঝুঁকেছেন। অনেকে পেয়ারা বিক্রি করে লোকসান গুনলেও এ মৌসুমে আমড়া বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেরেছেন। ফলে এ ফল এখন কৃষকদের নতুন আশার কারণ হয়ে উঠেছে। বরিশালের আমড়া জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর চাহিদা আরও বেড়েছে। স্বাদ, গন্ধ ও মানের কারণে বরিশাল বিভাগের আমড়া নিজস্ব পরিচিতি তৈরি করেছে।
চলতি মৌসুমে ফুল ঝরে যাওয়ায় ফলন কিছুটা কম হলেও দাম ভালো থাকায় কৃষকরা সন্তুষ্ট। গতবছর মানভেদে প্রতি মণ আমড়া ১০০০-১৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে মৌসুমের শেষের দিকে দাম বেড়ে ২-৩ হাজার টাকায় ঠেকেছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমে ২০০-২৫০ কোটি টাকার আমড়া বেচাকেনা হয়। জিআই পণ্য হওয়ার কারণে কৃষকরা আরও বেশি আগ্রহী হচ্ছে আমড়া উৎপাদনে। আগামীতে জেলায় এর উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পিরোজপুরে ৫৭৭ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ১২৪ টন আমড়া উৎপাদিত হয়েছে, যা বরিশাল বিভাগের ভেতরে উৎপাদনে সর্বোচ্চ।
ভিমরুলি বাজারের আমড়ার আড়তদার লিটু ব্যাপারী বলেন, ‘পিরোজপুরের আমড়ার সারাদেশে সুনাম রয়েছে। আকারে বড়, সুস্বাদু এবং ফরমালিন মুক্ত হওয়ায় মানুষের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে এই আমড়া। আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাজারের সন্ধান পাচ্ছি। চাহিদা বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘মৌসুমে ২০ জন শ্রমিক আমার অধীনে কাজ করে। এখন মৌসুম প্রায় শেষের দিকে তাই শ্রমিক কম। তারপরও প্রতিদিন ৪০০-৫০০ বস্তা আমড়া আমি নিজেই সাপ্লাই দিই।’
আটঘর বাজারের আমড়ার আড়তদার জসিম হাওলাদার বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ২০০-২৫০ কোটি টাকার আমড়া বেচাকেনা হয়েছে। আগামীতে যদি ফলন ভালো হয়, তাহলে এর পরিমাণ ৩০০-৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’
আমড়াচাষি মিঠুন মণ্ডল বলেন, ‘বরিশালের আমরা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমাদের বেচাকেনা আরও বাড়বে। এতে আমরা অনেক খুশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আনুপাতিক হারে ফলন কম ছিল। বৃষ্টি, বন্যাসহ অন্যান্য সমস্যার কারণে ফলন কম হয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, আগামী বছর ফলন বেশি হবে। তখন ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
কুয়াকাটা থেকে আমড়া কিনতে এসেছেন জসিম ব্যাপারী। তিনি বলেন, ‘এখানকার আমড়ার মান খুব ভালো। আকারে বড়, স্বাদেও মিষ্টি। প্রতিবছর ১০-১৫ লাখ টাকার আমড়া কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রি করি।’
আমড়া পাইকারি দোকানের শ্রমিক সুমন মণ্ডল বলেন, ‘জিআই পণ্য হওয়ার কারণে দেশের বাইরেও আমড়া পাঠানো সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকায় আমড়া উৎপাদনের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এ বছর প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি আমড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে।’
পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৌমিত্র সরকার বলেন, পিরোজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় ৫৭৭ হেক্টর জমিতে আমড়ার আবাদ হয়। উৎপাদন হয় ১০ হাজার ১২৪ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য প্রায় শতকোটি টাকা।
তিনি বলেন, ‘এখানকার আমড়া জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় সুনাম বাড়ছে। উৎপাদনও বেড়েছে। নতুন করে যারা এ ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন, তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
| শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |

