২ October ২০২৫ Thursday ৯:৫৭:৫৩ PM | ![]() ![]() ![]() ![]() |
নগর প্রতিনিধি:

বিজয়া দশমীতে বরিশালের মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন সনাতন ধর্মের নারী-পুরুষরা। দিনভর আনন্দ উল্লাসের পর বেজে ওঠে বিষাদের সুর। কেননা টানা পাঁচদিন পর বাবার বাড়ি থেকে দেবী দুর্গাকে দেবালয়ের কৈলাসে স্বামীর বাড়িতে বিদায় জানাতে হবে তাই।
সেই সঙ্গে প্রতিমা বিসর্জন আর বিষাদের সুরে শেষ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, শারদীয় দুর্গাপূজা।
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বরিশালের সব মন্দির-মণ্ডপে বেজে ওঠে বিদায়ের সুর।
নগরীর কীর্তনখোলা নদীর চরকাউয়া খেয়া ঘাট এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পর শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। ওই সময় সর্ব প্রথম প্রতিমা বিসর্জন দেন নগরীর জিয়া সড়ক এলাকার শ্রী শ্রী জয় দুর্গা ও কামেশ্বরী মন্দির।
এরপর রাত ৮টার পর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে শঙ্খ আর উলুধ্বনি, ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবী বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে চরকাউয়া খেয়াঘাটে কীর্তনখোলা নদীর তীরে আসেন পুণ্যার্থীরা। এসময় কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে ভিড় জমে ভক্তদের।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বর্গলোক কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসেন দেবী দুর্গা। নির্দিষ্ট তিথি পর্যন্ত বাবার বাড়িতে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ের কৈলাসে স্বামীর বাড়িতে। দেবীর অবস্থানকালে এই পাঁচদিন পৃথিবীতে ভক্তরা দেবীর বন্দনা করেন।
এদিকে, বিজয়ী দশমীতে পূজা উদযাপনের এদিন মন্দিরে মন্দিরে নারী ভক্তরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গার পায়ে সিঁদুর নিবেদন করেন তারা, যা ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলার অংশ হিসাবে পরিচিত। এই আচারটি দেবী দুর্গার শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তারপর হিন্দু নারীরা একে অপরের গায়ে সিঁদুর মাখিয়ে জীবনে সমৃদ্ধি কামনা করেন।
অপরদিকে, বিসর্জনকে কেন্দ্র করে বরিশাল কীর্তনখোলা নদীর পাড় এবং আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে বরিশাল মহানগর পূজা কমিটির পক্ষ থেকে অস্থায়ী প্রতিমা বিসর্জন মঞ্চ নির্মাণ করা হয় কীর্তনখোলার চরকাউয়া খেয়া ঘাটে।
বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোপাল সাহা জানান, কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এ বছর সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গা উৎসব পালন করতে পেরে খুশি। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। সব ধর্মের মানুষ যাতে এক হয়ে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে দেবীর কাছে এমন প্রার্থনার কথা জানান পূজা উদযাপন পরিষদের এই নেতা।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার রবিউল আল আমিন বলেন, বিসর্জনে তারা সকল প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। ডুবুরি দলসহ তারা সার্বক্ষণিক কাজ করছে। দুর্গা বিসর্জনে তাদের পৃথক দুটি টিম বরিশাল নদী বন্দর এলাকায় কাজ করে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়েছে। এজন্য বিসর্জনস্থল কীর্তনখোলা নদীর তীরসহ গোটা নগরী নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি, সেনাবাহিনী, র্যাব, আনসার বাহিনীরা সদস্যরা নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, এবার বরিশাল জেলা ও মহানগরী মিলিয়ে ৬৪০টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল নগরীতে ৪৭টি পূজা মণ্ডপে উর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে মহানগরীর ১৮টি মণ্ডপের প্রতিমা কীর্তনখোলা নদীতে বিসর্জন দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা।
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |