জেরুজালেম, ৩০ সেপ্টেম্বর – গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা সংঘাত শেষ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এই পরিকল্পনায় এরই মধ্যে সমর্থন জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় নেতারা। তবে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এখনো আনুষ্ঠানিক কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব নেতারা কী বলছেন-
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আমি গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সমর্থন জানাই। এটি আমাদের যুদ্ধের সব লক্ষ্য পূরণ করবে। এই পরিকল্পনা আমাদের জিম্মিদের ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনবে, হামাসের সামরিক ক্ষমতা ধ্বংস করবে, তাদের রাজনৈতিক শাসনের সমাপ্তি ঘটাবে এবং গাজা আর কখনোই ইসরায়েলের জন্য হুমকি হবে না।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আন্তরিক ও দৃঢ় প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাচ্ছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। একই সঙ্গে শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার সক্ষমতার ওপর আস্থা পুনর্ব্যক্ত করছি আমরা।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, আমি ট্রাম্পের প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বের প্রশংসা করি। তুরস্ক ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।”
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া সবসময়ই ট্রাম্পের এমন প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায়। আমরা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিপূর্ণ সমাপ্তি চাই।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেন, পরিকল্পনাটি যুদ্ধ বন্ধ করার সর্বোত্তম উপায়। হামাসকে এতে রাজি হতে হবে ও শান্তির পথ স্পষ্ট করতে হবে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, আমি ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানাই। হামাসকে এখনই সব জিম্মি মুক্তি দিতে হবে ও পরিকল্পনা মেনে চলতে হবে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি পরিকল্পনাটিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে সব পক্ষকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসাযোগ্য। আমরা ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানাই। যুদ্ধ বন্ধ, জিম্মিদের মুক্তি ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এই পরিকল্পনার তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, এটি ঐতিহাসিক একটি সুযোগ। আমার ধারণা, এটি শেষ পর্যন্ত চোখের জলে শেষ হবে। আমাদের সন্তানরা আবার গাজার বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাধ্য হবে। আমরা পর্যবেক্ষণ, পরামর্শ ও বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। তবে যে উদযাপন চলছে, তা একেবারেই হাস্যকর।
গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী
গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের প্রধান জিয়াদ আল-নাখালার মন্তব্য হলো, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে এমন কিছু চাপিয়ে দিতে যাচ্ছে, যা তারা যুদ্ধে অর্জন করতে পারেনি। তাই আমরা এই পরিকল্পনাকে গাজা উপত্যকা ধ্বংসের কৌশল হিসেবে দেখছি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)
ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া ক্যালাস বলেছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা একটি স্থায়ী শান্তির সুযোগ। ইসরায়েল এরই মধ্যে সমর্থন জানিয়েছে, হামাসকেও তাৎক্ষণিকভাবে এটি মেনে নিতে হবে ও জিম্মিদের মুক্তি দিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে।
বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, মিশর, জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কাজ করার প্রস্তুতি রয়েছে, যাতে চুক্তি চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত হয় এবং অঞ্চলের জনগণের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা যায়।
জাতিসংঘ মুখপাত্র আলেসান্দ্রা ভেলুচ্চি বলেনে, আমরা শান্তি প্রচেষ্টার সব ধরনের মধ্যস্থতাকে স্বাগত জানাই। মানবিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি যেকোনো শান্তি পরিকল্পনায় সমর্থন দিতে প্রস্তুত।
সূত্র: জাগো নিউজ
এনএন/ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫