নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য নিরসন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ ছয় দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন। তারা জানিয়ে দিয়েছে, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মস্থলে ফিরবেন না। ফলে আগামী ১ অক্টোবর থেকে সারা দেশের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম ও ১২ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ও অন্যান্য রিপোর্টিং কার্যক্রম অনিশ্চয়তার মুখে পরেছে। আন্দোলনকারীদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত— কর্মস্থলে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যপারে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় দাবী বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ কতৃক ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে, সিভিল সার্জন চাঁদপুর মহোদয়কে এ ব্যাপারে স্মারকলিপি জমা দেন হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের চাঁদপুর জেলা শাখার নেতারা। সিভিল সার্জন চাঁদপুর এর পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন এমওসিএস ডাঃ মোঃ শাখাওয়াত হোসেন স্যার, উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলার সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক আরিফ মোহাম্মদ রুহুল ইসলাম, সদরের সভাপতি মোঃ ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক রাবেয়া আক্তার, জেলার অর্থ সম্পাদক বি, এম,রোকনুল ইসলাম।
তাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর তৃণমূলে শিশুদের প্রাণণঘাতী ১০টি রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে কাজ করলেও এখনও তারা টেকনিক্যাল পদমর্যাদা থেকে বঞ্চিত। এতে সরকারি অন্যান্য কর্মচারীদের তুলনায় তারা চরম বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
তাদের দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য সচিব ও মহাপরিচালক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০২০ সালে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী রেজুলেশন গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়িত হয়নি।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, তারা বহু বছর ধরে শুধু আশ্বাস শুনে যাচ্ছেন। এ কারণে এবার দাবি পূরণ না হলে টিকাদান কর্মসূচি চালু রাখা সম্ভব হবে না।
৬ দফা দাবীতে স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশন দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে, স্বাস্থ্য সহকারীদের কাঙ্ক্ষিত দাবী পূরন না হওয়ায় কেন্দ্রীয় দাবী বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ আগামী ১লা অক্টোবর থেকে কর্ম বিরতি পালনের ঘোষণা দেন, এই সময় ইপিআই, টাইফয়েড ক্যাম্পেইন সহ সকল প্রকার কাজ বন্ধ থাকবে, উল্লেখ্য আগামী ১২ই অক্টোবর থেকে সারা দেশে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখন অনিশ্চয়তা মধ্যে পরেছে।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে আমরা ন্যার্য দাবী থেকে বঞ্চিত। “আমরা শুধু আশার বাণী শুনে যাচ্ছি। তাই ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যেতে বাধ্য হবো।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান অন্তবর্ত সরকার বৈষম্যের শিকার ২০ হাজার স্বাস্থ্য সহকারীর দাবি পূরণে এগিয়ে আসবে। আমরা চাই অধিদপ্তর এবং মন্ত্রনালয় আমাদের কালক্ষেপণ না করে আমাদের দাবী সমূহ বাস্তবায়ন করবেন, আমরা কোন শিশুদের বঞ্চিত করতে চাই না, আমরা চাই শিশুরা নিদিষ্ট সময় তাদের টিকা পাক।
২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের সভায় ৬৪ জেলার নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়।
স্বাস্থ্য সহকারীদের ছয় দফা দাবি
১. নিয়োগবিধি সংশোধন
২. শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে স্নাতক সংযোজন
৩. ১৪তম গ্রেড প্রদান
৪. ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান
৫. বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণ
৬. অন্যান্য ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন
স্বাস্থ্য সহকারীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন এবার শুধু আশ্বাসে আন্দোলন থামানো যাবে না। দাবি বাস্তবায়ন না হলে ইপিআই কার্যক্রম ও টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ থাকবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫