থ্রিলারকে হার মানানো বিমান ছিনতাইয়ের সেই রুদ্ধশ্বাস সাত দিনের যত ঘটনা

থ্রিলারকে হার মানানো বিমান ছিনতাইয়ের সেই রুদ্ধশ্বাস সাত দিনের যত ঘটনা

তাড়াতাড়ি আমি বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের দিকে ছুটলাম। সেখানে পৌঁছেই আমি জাপানি বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ দিলাম যে তারা যেন অন্য কোথাও যায়। কারণ এই নতুন দেশে তাদের চাহিদা মোতাবেক সেবা দেওয়ার যোগ্যতা আমাদের না–ও থাকতে পারে। উত্তরে তারা জানাল যে তাদের জ্বালানি কমে গেছে বিধায় যেকোনোভাবেই হোক তারা ঢাকাতেই অবতরণ করছে এবং তারা অবতরণ করল। বিমানের ভেতরে থাকা যাত্রীদের বিপদের কথা চিন্তা করে আমি তাদের অবতরণ বন্ধ করার চেষ্টা করলাম না। অবতরণের পর রানওয়ের শেষ মাথায় গিয়ে বিমান পার্ক করার নির্দেশ দেওয়া হলো পাইলটকে। এমন জায়গায় তাকে পার্ক করতে হবে, যাতে অন্য বিমানের অপারেশন বাধাগ্রস্ত না হয়। ওটা ছিল জাপান এয়ারলাইনসের বিমান ডিসি-৮, ফ্লাইট নম্বর ৪৭২। বিমানটা যাত্রা শুরু করেছিল প্যারিস থেকে। তারপর অবতরণ করেছিল এথেন্স, কায়রো, করাচি ও মুম্বাই বন্দরে। এটার গন্তব্য ছিল ব্যাংকক। বিমানে ছিল ১৫৬ জন যাত্রী এবং ১৪ জন ক্রু।’

ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে এ জি মাহমুদ লিখেছেন, ‘১৯৭৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বগুড়া সেনানিবাসে একটা বিদ্রোহ হয়েছিল। লেফটেন্যান্ট হাসান নামের এক অফিসারকে হত্যা করে সৈন্যরা। শুনেছিলাম, কিছু বিদ্রোহী সৈন্য ঢাকার পথে আসছিল। সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখ থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত আমি কন্ট্রোল টাওয়ারেই ছিলাম। মাত্র দুবার মন্ত্রিসভার মিটিংয়ে গিয়েছি। ১৯৭৭ সালের পয়লা অক্টোবর রাতে ঢাকায় আর্মি সিগন্যাল ব্যাটালিয়নের সৈন্যরা বিদ্রোহ করেছিল। আর্মি সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন ছিল কুর্মিটোলা বিমানবন্দরের লাগোয়া। বিদ্রোহীরা সীমানাদেয়াল ভেঙে শূন্যে গুলি ছুড়ছিল আর বিপ্লবী স্লোগান দিচ্ছিল।

বিমানের লোকজন (এয়ারমেন) তখন ঘুমিয়ে ছিলেন ব্যারাকে। বিদ্রোহীরা যূথবদ্ধ হয়ে এয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত অর্ডিন্যান্স ডিপোতে গিয়েছিল। তারা অস্ত্র বের করেও নিয়েছিল কিন্তু গোলগুলি পায়নি। একটা দল ঢাকা রেডিওর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। খুব ভোরে সার্জেন্ট আফসারের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র এয়ারম্যান বিমানবন্দরে প্রবেশ করে আমাদের অফিসারদের নির্বিচার গুলি করতে শুরু করে। বিমানবন্দরের ডিজি অফিসে ছিলাম আমি। সেখান থেকে একদল এয়ারম্যান আমাকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নিয়ে গেল।’

এ জি মাহমুদ এরপর লিখেছেন, ‘বগুড়ায় বিদ্রোহ হয়েছিল ২৮ সেপ্টেম্বর। বিমানবন্দরে কর্তব্যরত বিমানবাহিনীর অফিসারকে গুলি করে হত্যা করা হয় দোসরা অক্টোবর ১৯৭৭, ভোরবেলায়। সেনা সদর দপ্তর চার দিন সময় পেয়েছিল বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে আনার। ছিনতাইকারীদের প্রসঙ্গে আবার আসতে চাই। আমি বলেছিলাম, সমস্ত যাত্রীকে মুক্ত করে না দিলে ঢাকা ছাড়ার অনুমতি তারা পাবে না। এই মিটিংয়ে কাজ হয়েছিল। ছিনতাইকারীদের সম্ভাব্য গন্তব্য সম্পর্কে জাপানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল আমার। তিনি জানিয়েছিলেন যে আলজেরিয়ার সরকার তাদের সাময়িক রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে সম্মত হয়েছে। তাদের আলজেরিয়া যাওয়ার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ম্যাপ এবং চার্ট দিয়েছি। ছাব্বিশজন যাত্রী নিয়ে ছিনতাইকারীরা চলে গেল। সমস্যার ইতি হলো সেখানে। ওরা যখন চলে যায়, তখন আমি ছিলাম না বিমানবন্দরে। আমি চলে আসার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শেখ জালাল বিমানবন্দরে জাপানি ডেলিগেটদের দেখা শোনার দায়িত্বে থাকলেন। তিনি খুব ভালো জাপানি ভাষা জানতেন এবং অবিরত ওই ভাষায় কথা বলতে পারতেন।’

Explore More Districts