শ্রীপুরে গড়াই নদীর ভাঙ্গনে বিলিন একরের পর একর ফসলি জমি, হুমকির মুখে নদীর বাঁধ ও বসতভিটা

শ্রীপুরে গড়াই নদীর ভাঙ্গনে বিলিন একরের পর একর ফসলি জমি, হুমকির মুখে নদীর বাঁধ ও বসতভিটা

মহসিন মোল্যা, বিশেষ প্রতিবেদক-

শ্রীপুর উপজেলার আমলসার ইউনিয়নের কোদলা মাঝিপাড়া এলাকায় একরের পর একর ফসলি জমি, গাছপালা গড়াই নদীর গর্ভে বিলিন হয়েছে। গত তিন বছরে নদী ভাঙনের কবলে পর্যায়ক্রমে এলাকার প্রায় ২০ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। সম্প্রতি ওই এলাকা নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। সম্প্রতি নদী ভাঙনের কবলে প্রায় ৫ একর ফসলি জমি ও গাছপালা নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে শত শত পরিবার। নদী ভাঙনের মাত্রা এতটাই বেড়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে নদীর বেড়িবাঁধ ও এলাকার শত শত বসতভিটা হুমকির মুখে রয়েছে। তবে ভাঙন রোধে তিন বছরেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ এমনটিই অভিযোগ স্থানীয়দের।

শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গড়াই নদীতে উত্তাল ঢেউ সাথে প্রবল স্রোত যা নদীর তীরে আঘাত করছে। মুহুর্তেই নদীর পাড় স্রোতের সাথে মিশে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে ভাঙন এলাকার পরিধি। নদীর এ ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে কোদলা মাঝিপাড়া এলাকা। সকলের চোঁখে-মুখে এখন আতঙ্কের ছাপ। অনেকেই চাষাবাদের যতটুকু ফসলি জমি সবটুকুই নদী গর্ভে হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন৷ প্রতিনিয়ত ভাঙনের পরিধি বেড়েই চলছে এ এলাকায়। তবে নদীর ভাঙন রোধে কোন পদক্ষেপ চোঁখে পড়েনি৷ এখনই নদী ভাঙন রোধ করা না গেলে একরের পর একর ফসলি জমি, গাছপালা, বেড়িবাঁধসহ শত শত বসতভিটা নদী গর্ভে বিলিনের আশঙ্কা রয়েছে।

এলাকাবাসির অভিযোগ, গেল তিন বছর ধরে এ এলাকা ভাঙনের কবলে পড়লেও নদী ভাঙ্গন রোঁধে নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। দ্রুত নদী ভাঙ্গন রোধে স্লাপ বাঁধ অথবা জিও ব্যাগের দাবি তাদের।

ভুক্তভোগি কোদলা মাঝিপাড়া গ্রামের কৃষক সাহেব আলী জানান, তিন বছর ধরে আমাদের এ এলাকায় নদী ভাঙছে। আমাদের সব ভেঙে শেষ হয়ে গেছে। এবাবের ভাঙনে ৫ একর মত জমি নদীতে ভেঙে গেছে। যে জমিতে বিভিন্ন ফসল হতো। নদী ভাঙন প্রায় বেড়িবাঁধ ধরলো। আর এই বেড়িবাঁধের সাথেই আমাদের বাড়ি। বাড়িও আমাদের ঝুঁকির মুখে। বাড়ি ভেঙে গেলে আমাদের অন্য কোথাও জায়গা নেই যে, সেখানে গিয়ে বসবাস করবো। সরকারের কাছে আমরা নদী ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।

একই গ্রামের বাসিন্দা দিপক মণ্ডল বলেন, এই নদীর ভিতর আমাদের চাষাবাদের প্রায় ৫-৭ বিঘা জমি নদীর মধ্যে ভেঙে চলে গেছে। এখানে ২ বিঘা নিয়ে একটি খেলার মাঠ ছিল তাও নদীর ভিতর চলে গেছে। আমরা এতটাই আতঙ্কে আছি কখন যেন নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আমাদের ঘরবাড়ি নদীর ভিতর চলে যায়৷ সরকারের কাছে অনুরোধ আপনি আমাদের বাঁচান।।

কোদলা মাঝিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মানিক মোল্যা বলেন, গত তিন বছর যাবত এখানে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এবার প্রায় ৫ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। আমরা তিন বছর ধরে এই ভাঙানোর কবলে আছি। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এখানে বাঁধ অথবা জিও ব্যাগ দিলে আমাদের সুবিধা হয়। ভাঙ্গনের পাশেই বেড়িবাঁধ তার পাশে আমাদের বসতবাড়ি। আমাদের বসতবাড়ি যখন চলে যাবে তখন আমরা যাব কোথায়? আমরা সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।

আমলসার ইউনিয়নের বাসিন্দা ও মাগুরা জেলা কৃষকদলের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক রাজু মোল্যা বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার গড়াই নদীর ভাঙ্গনের প্রবণতা বেশি দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে নদীর পাড়ের সড়ক পর্যন্ত ভাঙ্গন চলে এসেছে। নদীর পাড়ে বসবাসকারী খেটে খাওয়া দরিদ্র ও জনগোষ্ঠী চরম আতঙ্কে দিন পার করছে। অবিলম্বে ভাঙ্গন রোধে কার্যকারী ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ বিষয়ে মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার জাহান জানান, আমরা ভাঙনের বিষয়ে অবগত হয়েছি। তবে ভাঙন এলাকায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নাই৷ তবে ফসলি জমি রয়েছে। এখন পানি বেড়েছে। তবে পানি কমলেই জিও ব্যাগের মাধ্যমে অস্থায়ী জরুরি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Explore More Districts