ঘুষ না পেয়ে মনগড়া প্রতিবেদন, সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ

ঘুষ না পেয়ে মনগড়া প্রতিবেদন, সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ

২১ September ২০২৫ Sunday ৩:২৫:০৭ PM

Print this E-mail this


নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

ঘুষ না পেয়ে মনগড়া প্রতিবেদন, সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ

বরিশাল সদর ভূমি অফিসে দীর্ঘদিন যাবৎ সার্ভেয়ার পদে কর্মরত রয়েছেন রিয়াজ উদ্দিন। প্রায়সময়ই সার্ভেয়ার রিয়াজের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ উঠলেও রহস্যময় কারনে থেকে যান ধরাছোয়ার বাহিরে। অনেকে রিয়াজের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অজানা আতঙ্কে মুখ খুলছিলেন না। তবে হঠাৎই বরিশাল সদর ভূমি অফিসের অনিয়ম-ঘুষ বাণিজ্যের হোতা রিয়াজের গোমর ফাঁস হতে শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে অনেক ভুক্তভোগী সার্ভেয়ার রিয়াজ কর্তৃক প্রতারণার শিকার হয়ে তাদের অসহায়ত্বের কথাও তুলে ধরেন। আর এরই মাঝে এক ভুক্তভোগী সার্ভেয়ার রিয়াজের বিরুদ্ধে অনিয়ম-ঘুষবাণিজ্য ও অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে মাঠ পর্যায়ে তদন্তকালে মনগড়া রিপোর্ট প্রকাশের বিচার চেয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, বরিশাল নগরীর ১০নং ওয়ার্স্থ বিএডিসি’র পূর্বপাশে কীর্তনখোলা নদী সংলগ্ন বগুড়া আলেকান্দা মৌজার জে এল নং-৫০, খতিয়ান-৩৩৩ এর এস.এ দাগ নং-৫২৯১ এর ৭.২৫ শতাংশ জমি রেকর্ডিয় মালিকদের থেকে ক্রয় করেন ভুক্তভোগী নুরুল হক মৃধা। তিনি এই জমি ক্রয় করে দীর্ঘ বছর বসবাস করে আসছেন। কিন্তু হঠাৎই বিএডিসি কর্তৃপক্ষ বাউন্ডারি ওয়াল নির্মানের কাজ শুরু করেন। বিএডিসির অপরিকল্পিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মানের কারনে ভুক্তভোগি নুরুল হকের প্রায় ২.৫০ শতাংশ জমি বিএডিসির অভ্যন্তরে চলে যায় এবং তাদের যাতায়াতের পথটিও বন্ধের উপক্রম হয়। এতে ভুক্তভোগী নুরুল হক বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে এম.পি কেস নং-৩৭৮/২০২৫(১৪৪/১৪৫ ধারা) দায়ের করেন এবং মোকাম বরিশাল সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে দেওয়ানী ১৫১/২০২৫ইং মোকদ্দমা দায়ের করেন। যা বর্তমানে উভয় আদালতে চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায় এম.পি কেস নং ৩৭৮/২০২৫ (১৪৪/১৪৫ ধারা) এর বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরিশাল সদর ভূমি কর্মকর্তাকে সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইং তারিখে বরিশাল সদর ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রিযাজ উদ্দিন সরেজমিনে যান। এসময় বিরোধীয় জমির কোন মাপজোক না করে শুধুমাত্র উপস্থিতি স্বাক্ষর নিয়া চলে আসে এবং ভুক্তভোগী নুরুল হককে পরে দেখা করতে বলে। কিন্তু পরবর্তীতে অভিযুক্ত সার্ভেয়ার রিয়াজ বিবাদীপক্ষ থেকে অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং তারিখে একটি মনগড়া-বানোয়াট ও হয়রানীমূলক রিপোর্ট প্রদান করেন।

এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী নুরুল হক বলেন, আমার দলিল, এস রেকর্ড অনুযায়ী আমি ৭.২৫ শতাংশ জমির মালিকানা দাবিদার। অথচ সরেজমিনে মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ জমি পেয়েছি। বাকি জমি বিএডিসি কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে পরিকল্পনাহীন বাউন্ডারি ওয়াল নির্মান করে তাদের দখলে নিচ্ছে। আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমার জমি ফিরে পেতে বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ও সহকারি জজ আদালতে মামলা দায়ের করি। এরই প্রেক্ষিতে বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে সদর ভূমি অফিসে সরেজমিনে তদন্ত রিপোর্ট চাইলে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রিয়াজকে আমার মালিকানার প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রাধি দেখালে সে পরে দেখা করতে বলে। আমি তাকে তার দাবিকৃত ঘুষ না দেয়ায় সে সরেজমিনে জমির মাপজোক না করেই একটি বানোয়াট, মনগড়া ও হয়রানীমূলক রিপোর্ট দাখিল করেন। আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমার মালিকানাধীন জমি ফেরত চাই আর এই ঘুষখোর সার্ভেয়ার রিয়াজের শাস্তির দাবি জানাই, যাতে আর কোন ব্যাক্তি হয়রানীর শিকার না হয়।

সূত্রে আরো জানাগেছে, ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রিয়াজ উদ্দিন জমির মিউটিশনের আবেদন তার কাছে গেলেই ঘুষ বাবদ ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন আবেদনকারীদের থেকে। এতে আবেদনকারী ব্যক্তিরা চরম ক্ষিপ্ত হলেও নীরবে সহ্য করেন রিয়াজের এ ঘুষ বাণিজ্যের অত্যাচার। স্বয়ং বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিও তার রোষানলে পড়ে, অবশ্য সে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত থাকায় তাকে বেশি বেগ পেতে হয়নি। আরো জানাযায়, সার্ভেয়ার রিয়াজ সরেজমিনে তদন্তে গেলেই শুরু হয় তার ঘুষবাণিজ্য। এতে তার উপরে চরম ক্ষিপ্ত ভুক্তভোগিরা। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। বরিশাল নগরীর বাসিন্দা আলামিন সিকদার নামে এক ভুক্তভোগী সার্ভেয়ার রিয়াজ উদ্দিনের ছবিতে কমেন্ট করে লিখেন রিয়াজ ঘুষ খোর, আমাদের একটা ঘটনায় সরেজমিনে তদন্তে এসে মোটা অঙ্কের টাকা চায়। তাকে টাকা না দেয়ায় অপরপক্ষ থেকে অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নিয়ে মনগড়া রিপোর্ট প্রদান করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আলামিন বলেন, আমার বাবা বিআইডব্লিউ এর থেকে নগরীর ফলপট্টির মুখে একটি স্টল বাৎসরিক হিসেবে লিজ নিয়া হোটেল ব্যবসা করেন। তিনি মারা যাবার পরে আমার বড় ভাই সেই দোকান নিজের দখলে নেন। এ ঘটনায় বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা হলে সার্ভেযার রিয়াজ তদন্তে গিয়া ঘুষ চাইলে আমার তা দিতে না পারায়আ আমার ভাইয়ের থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়া তদন্ত রিপোর্টে বিআইডব্লিউটির জমি উল্লেখ না করে তার দখলে আছে বলে রিপোর্ট প্রদান করেন। এদিকে নগরীর পলাশপুরের বাসিন্দা জামাল নামে এক ব্যক্তি বলেন এই ঘুষখোর রিয়াজের বিরুদ্ধে যদি কেউ মামলা করে তবে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করবো। আর এভাবেই ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার রিয়াজের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। তারাও সার্ভেয়ার রিয়াজের শাস্তির দাবি জানান।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত রিয়াজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারবো না, আমি এসিল্যান্ড স্যারের সাথে কথা বলেন।

এ বিষয়ে বরিশাল সদর (ভূমি) সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আজহারুল ইসলাম বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমানিত হলে সার্ভেয়ার রিয়াজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক


শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

Explore More Districts