নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরের কেশবপুর , মণিরামপুর, ঝিকরগাছা ও নাভারণ সরকারি খাদ্য গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী বিপুল পরিমাণ পচা চাল মজুদ থাকার অভিযোগ রয়েছে । নিম্নমানের চালগুলো সদ্য শেষ হওয়া বোরো সংগ্রহ অভিযানে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে অল্প দামে ক্রয় করা হয়েছে । ওই গুদাম গুলো তদন্ত করে ইতিমধ্যে ডিসিফুড ব্যাপক বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । ফলে ওই চারটি গুদামে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করার দাবী উঠেছে ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজশাহীর দুর্গাপুর ও বাগমারার সরকারি খাদ্য গুদামে অতি নিম্নমানের চাল নিয়ে তোলপাড় হলে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে সারাদেশের খাদ্যশস্যের গুণগত মান যাচাই-বাছাই করে রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়েছে । ওই আদেশ অনুযায়ী খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ স্বাক্ষরিত ৩০১০ নং স্বাক্ষরকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে যশোরের দশটি খাদ্য গুদাম যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তিন কর্ম দিবস সময় নির্ধারণ করে দেন । তদন্ত কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে ডিসিফুডকে ।
ওই তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েই মাঠে নেমে পড়েন যশোরের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান। সরেজমিনে বিভিন্ন খামালের খাদ্যশস্যের মান যাচাই-বাছাই করে নিম্নমানের খাদ্যশস্যের থাকার পরেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে গুদামের খাদ্যশস্যের ক্লিন সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । যার ফলে সংশ্লিষ্ট গুদাম গুলো স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পূনরায় তদন্তের দাবী উঠেছে ।
সূত্র বলছে , কেশবপুরে প্রায় ৪ শ’ মেঃটন নিম্নমানের চাল মজুদ রয়েছে । গুদামের সাবেক ওসি এলএসডি মাসুদ রানা নিম্নমানের খাওয়ার অনুপযোগী ওই চালগুলো বিভিন্ন প্রকল্পের ডিও থেকে ক্রয় করে সদ্য সংগ্রহের চাল হিসেবে গুদামে মজুদ দেখিয়েছেন ।
দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে স্বল্পমূল্যে ওই চাল ক্রয় করা হয়েছে । এখানে সদ্য সংগ্রহের খামালে ভারত থেকে আমদানীকৃত চালও মজুদ থাকার অভিযোগ রয়েছে । গত সপ্তাহে কেশবপুর খাদ্য গুদামের খাদ্যশস্যের গুণগতমান তদন্ত করতে গিয়ে যশোরের ডিসিফুড ওই নিম্নমানের চাল দেখে ওসি এলএসডিকে প্রত্যাহারের ভয়-ভীতি দেখান । পরে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তিনি গুদামের খাদ্যশস্যের কোন ত্রুটি নেই মর্মে ক্লিন সার্টিফিকেট দেন বলে অভিযোগ রয়েছে । নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে যাচাই বাছাই করলে কেশবপুরের খাদ্য গুদামে মজুদ থাকা নিম্নমানের বিপুল পরিমাণ চাল পাওয়া যাবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে ।
একইভাবে মণিরামপুর খাদ্য গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী নিম্নমানের চাল মজুদ রয়েছে । ডিসি ফুড ওই গুদামে তদন্তে গিয়ে ওসিএলএডিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে তার অফিসে সাক্ষাৎ করতে বলেন । পরে অর্থের বিনিময়ে মনিরামপুর গুদামের খাদ্যশস্যের ক্লিন সার্টিফিকেট দেন ।
মণিরামপুরে বোরো/২৫ সংগৃহীত চাল, ফলিত চালের খামালের ভিতরে বিনির্দেশ বহির্ভূত চাল মজুদ রয়েছে । ৩নং গুদামে সর্বশেষ খামালে ৫০ কেজির বস্তায় রয়েছে পুরাতন চালের মজুদ । যার পরিমান প্রায় ৪০ মেট্রিক টন। ওই গুদামের খামালে মাঝখানে ফাঁকা না রেখে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে । যাতে হঠাৎ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে । অপকর্ম ঢাকতে গুদামটি অগোছালোভাবে রেখে দেয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে ।
নাভারণ সরকারি খাদ্য গুদামে বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের খাওয়ার অনুপযোগী চালের মজুদ থাকার অভিযোগ রয়েছে । এখানে মাঝখানের ৬ নং গুদামটির খাদ্যশস্যের অবস্থা বেশি নাজুক । চার নম্বর গুদামের খামালের মাঝখানে রয়েছে বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের খাওয়ার অনুপযোগী চাল ।
ঝিকরগাছা খাদ্য গুদামে মজুদ থাকা চালের অবস্থা আরো নাজুক । এখানে রয়েছে খাওয়ার অনুপোযোগী চাল । ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার গুদামটি যাচাই বাচাই করতে গিয়ে ডিসি ফুড ৪টি খামাল থেকে খুবই নিম্নমানের চালের স্যাম্পল সংগ্রহ করেন । ওই স্যাম্পল টেবিলের উপরে রেখে বাইরে গেলে কৌশলে গুদামের স্টাফরা সংগ্রহকৃত স্যাম্পল পরিবর্তন করে দেন । ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ডিসি ফুড সেফাউর রহমান। তিনি গুদামের ওসিএলএসডিকে প্রত্যাহারের ভয় দেখিয়ে দুপুরে লাঞ্চ না করে চলে আসেন । পরে ঝিকরগাছা খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি আল আমীন কবীর বিশ্বাস ডিসিফুডকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন , বাইরের অন্যান্য জেলা থেকে যশোর জেলায় তুলনামুলক চালের মান ভালো আছে । মিলারদের সব চাল দেখে নেওয়া সম্ভব না । কিছু খারাপ থাকলে মিল থেকে পাল্টিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে । খাওয়ার অনুপযোগী চাল গুদামে মজুদ আছে এমন তথ্য সঠিক নয় ।