কবরস্থানে দিনে জীবিত উদ্ধার রাতে সেই নবজাতকের দাফন

কবরস্থানে দিনে জীবিত উদ্ধার রাতে সেই নবজাতকের দাফন

চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে কবর দেয়ার সময় নড়েচড়ে উঠা সেই নবজাতকের হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে লাখো মানুষের হৃদয়ে কাঁদানো শিশুটি রাত সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর শহরের ফেমাস হাসপাতালে এনআইসিওতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। 

পরে শিশুটিকে উদ্ধার করা সেই গণমাধ্যম কর্মী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ডিএনএ টেস্টে করিয়ে শিশুটির জানাযার ব্যবস্থা করা হয়। রাত ২টা ৩০ মিনিটে চাঁদপুর বাস স্ট্যান্ড মসজিদের সামনে জানাযা শেষে সেই পৌর কবরস্থানে শিশুটিকে দাফন করা হয়।

এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি কার্টনে করে নবজাতক শিশুটিকে চাঁদপুর পৌর গোরস্থানে দাফনের জন্য দিয়ে যায়। সেখানকার গোরখোদক শিশুটিকে দাফনের জন্য আজান দিয়ে জানাজার প্রস্তুতি নিলে কার্টুন খুলে দেখেন শি-শুটি নাড়াচড়া করছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক তিনি সেখানে উপস্থিত কয়েকজন গণমাধ্যমকে জানান। পরে গণমাধ্যমকর্মীরা নবজাতকে উদ্ধার করে চাঁদপুর ফেমাস হাসপাতালে নিয়ে এনআইসিইউতে ভর্তি করায়। এরপর স্থানীয় সংবাদকর্মিসহ মানবিক লোকজনের সহায়তায় শিশুটিকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে রাত সাড়ে ৯টা শিশুটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। 

চাঁদপুর ফেমাস হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, শিশুটির জন্ম সম্ভবত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) হয়েছে। ভর্তি করার সময় তার অক্সিজেন লেভেল কম ছিল। হাসপাতালে আনার পর শিশুটিকে পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় শিশুটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবীর মারা গেছে।

এদিকে এই ঘটনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাঁদপুরসহ সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নবজাতকের দায়িত্ব নিতে চাঁদপুরসহ সারা দেশে প্রায় শতাধিক মানুষ গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করেন। ২৫ জন নারী এবং তাদের পরিবার হাসপাতালে শিশুটিকে দত্তক নিতে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি শিশুটিকে উদ্ধার এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করে মানবাধিক দৃষ্টান্ত দেখানো গণমাধ্যমকর্মীরা ব্যাপক প্রশংসিত হন।তবে কে বা কারা নবজাতকটিকে মৃত জেনে অথবা না জেনে কবর দিতে চেয়েছিলেন তা এখনো জানা যায়নি। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

শিশুটিকে উদ্ধার করে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মোসাদ্দেক আল আকিব ও আশিক বিন রহিম জানান, আমরি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি শিশুকে বাঁচানোর। হয়তো ব্যর্থ হয়েছি। তবে আমরা মানবিক দায়বোধ থেকেই সংবাদ প্রচারের আগে শিশুটির চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। যে বা যারা শিশুটিকে মৃত ভেবে অথবা ইচ্ছা করে কবর দেয়ার জন্য গোরস্থানে পাঠিয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা রইলো। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য চাঁদপুরের সাংবাদিক সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং প্রশাসনের ঐক্লান্তিক প্রচেষ্টা আমাদের মুগ্ধ করেছে। যারা আমাদের এই মানবিক কাজে সহযোগিতা করেছেন, সাহস এবং প্রেরণা দিয়েছে, তাদের সকলের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। 

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম/১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Explore More Districts