অনুমতি ছাড়াই ভিপি সম্পত্তির জমির শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে পুকুর বালু দিয়ে ভরাট করে নির্মিত হয়েছে চার তলা ভবন। এতে অর্পিত সম্পত্তি (ভিপি) লীজের শর্ত ভঙ্গের কারণে ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠি দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন-৪ শাখার ৩৪৫ নং স্বারকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি প্রেরণ করা হয়।
সূত্রে জানা যায়, মতলব পৌর এলাকাধীন মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজ গেইটে অবস্থিত করিম ম্যানশন ভবনের মাঝে ৮১.৭৫ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি মোঃ আব্দুল বারী ও মোঃ আব্দুল কাদির বিগত ৫৯/৭০-৭১ ভিপি লিজ কেইস এর মাধ্যমে একসনা (প্রতি বছর) ইজারা নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। উক্ত সম্পত্তির মধ্যে জমির শ্রেণি হিসেবে ভিটি, ডোবা, বাগান, বাড়ি ও পুকুর বিদ্যমান ছিল। কিন্তু লিজ গ্রহিতাগণের মাঝে মৃত আব্দুল কাদির এর ওয়ারিশগণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ক্ষমতার অপব্যবহার করে গোপনে বালু দিয়ে পুকুর ভরাট করেন এবং এতে চারতলা ভবন নির্মাণ করেন। এই নিয়ে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের ১৮ মে ২৪৫ নং স্বারকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের নিকট চিঠি প্রেরণ করেন। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক উক্ত চিঠির আলোকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং জুলাই মাসের ১৩ তারিখে ৫৪৯ নং স্বারকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন ও সূত্র থেকে জানা যায়, সাবেক ১৫৫ নং কলাদী মৌজার এস.এ ৭০৩, ২৫, ৬৫২ নং খতিয়ানে সাবেক ৫৭০, ৫৭১, ৫৭২ ও ৫৭৩ দাগে শ্রেণি ভিটি, বাগান,ডোবা, বাড়ি ও পুকুরসহ মোট ৮১.৭৫ শতাংশ ভূমি মতলব পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের নিলক্ষী গ্রামে মরহুম মোঃ আব্দুর রহমান মোল্লার দুই পুত্র বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ আব্দুল বারী ও মতলব পৌরসভার সাবেক মেয়র আওলাদ হোসেনের পিতা মোঃ আব্দুল কাদির একসনা লীজ গ্রহণ করে বসবাস করে আসছেন। এরই মাঝে মোঃ আব্দুল কাদির মৃত্যুবরণ করলে ২০১৭ সালে আবেদনের প্রেক্ষিতে ওয়ারিশদের নামে লীজ নবায়ন করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রতিবছর ভিপি সম্পত্তির লীজ নবায়নের পূর্বে উক্ত সম্পত্তির বর্তমান অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলের পর লীজ নবায়ন করা হয়।
এদিকে লীজকৃত ৮১.৭৫ শতাংশ ভূমির মধ্যে ৭৩/২০১৩ মোকদ্দমা মূলে উক্ত ভিপি সম্পত্তি থেকে লীজ গ্রহিতাগণ ১২.৫০ শতাংশ ভূমি অবমুক্ত করেন এবং বাকি ৬৯.২৫ শতাংশ ভূমি একসনা হিসেবে লীজ নিয়ে বর্তমানে বসবাস করছেন। তদন্ত চলাকালে সরেজমিনে দেখা যায় যে, সাবেক ৫৭০, ৫৭১, ৫৭২, ৫৭৩ দাগের হাল ২০৪৯, ২০৫০, ২০৫১, ২০৫২ দাগে একটি চারতলা ভবন, একটি টিনশেড ঘর, দুইটি সেমিপাকা ঘর, একটি একতলা ভবন এবং নির্মাণাধীন একটি ভবন রয়েছে। জমির নকশা তুলনা করে তদন্তকারীদল জানতে পারেন যে সাবেক ৫৭০ দাগের হাল ২০৫২ দাগে চারতলা ভবনের অবস্থান এবং সিএস ও বিএস জরিপে জমির শ্রেণি হিসেবে পুকুর রয়েছে!
পুকুরের স্থানে চারতলা ভবন থাকায় বিষয়ে তদন্তকারীদলের কাছে লীজ গ্রহীতাগণের প্রতিনিধিগণ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি রয়েছে বলে বিগত ১৯৯৮ ইং সনের ৪ মার্চ তারিখে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মতলব দক্ষিণ এর স্বাক্ষরিত ইমারত নির্মাণের একটি অনুমতিপত্র উপস্থাপন করেন। নিয়ম অনুযায়ী ইমারত নির্মাণের অনুমতির বিষয়টি জেলা প্রশাসকের এখতিয়ারাধীন বিষয়।
অপরদিকে উক্ত ভিপি সম্পত্তির লীজ নবায়নের জন্য বিগত ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারিখে তৎকালীন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) হাবিব উল্ল্যাহ পাটোয়ারী কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক ৫৭০ দাগ হালে ২০৫২ দাগের ভূমিতে চারতলা ভবন দৃশ্যমান থাকলেও সেখানে পুকুর রয়েছে এবং মাছ চাষ করা হয় উল্লেখ করেন! আর এই প্রতিবেদনের আলোকে ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারী ২১১৭/১০৫৮৩২ নং ডিসিআর এর মাধ্যমে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) জসিম উদ্দিন লীজের টাকা গ্রহণ করে লীজ নবায়নের সহায়তা করেন।
সেই সাথে উক্ত ভিপি সম্পত্তির সাবেক রেকর্ডের সাথে হাল বিএস রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, সাবেক ৫৭০ ও ৫৭২ দাগের হাল ২০৫২ ও ২০৫১ দাগের ভূমি সরকারের নামে রেকর্ড হলেও সাবেক ৫৭১ দাগের হাল ২০৯১, ২০৯২ ও ২০৫১ দাগ ভুক্ত কোনো ভূমি সরকারের নামে রেকর্ড হয়নি। এছাড়াও সাবেক ৫৭৩ দাগের হাল ২০৫০, ২০৫১ ও ২০৪৯ দাগ ভুক্ত হলেও ২০৫০ দাগে ২৮.১৯ শতাংশ, ২০৫১ দাগে ৫.১২ শতাংশসহ মোট ৩৩.৩১ শতাংশ সরকারের নামে রেকর্ড হলেও এই দাগ সমূহের ১০.৪৪ শতাংশ ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বিএস রেকর্ড হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন-৪ শাখা থেকে ২০২৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ৩৪৫ নং স্বারকে জেলা প্রশাসককে লীজের শর্ত ভঙ্গ করে ভবন নির্মাণের বিষয়ে নির্দেশক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে লীজের শর্ত ভঙ্গ করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার দায়ে লীজ বাতিল, লীজের জায়গায় সকল স্থাপনা উচ্ছেদকরণ এবং তৎকালীন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার)দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলা হয়।
এই বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ওই ভিপি সম্পত্তির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রতিবেদক: মাহফুজ মল্লিক/ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫