আধ্যাত্মিক নগরী হিসেবে পরিচিত সিলেটে আবাসিক হোটেলগুলোতে অনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। একের পর এক অভিযানে পুলিশ তরুণ-তরুণীকে আটক করছে। এতে নগরীর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চরম দুশ্চিন্তা।
গত কয়েক দিনে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে একাধিক তরুণ-তরুণী। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দক্ষিণ সুরমার কদমতলিস্থ আবাসিক হোটেল ঢাকা প্যালেসে অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করে পুলিশ। এরা হলেন—হোটেল স্টাফ মো. ফাহিম মিয়া (১৮), মাহমুদুল হাসান রিফাত (২১), রিতি আক্তার (২১) ও তাসমিয়া আহমদ (১৯)। তাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় নন-এফআইআর মামলা (নং-১৭৮/১২/০৯/২০২৫) দায়ের করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এর আগে একই দিন রাত সোয়া ১১টার দিকে নগরীর আম্বরখানার দুটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ তরুণ-তরুণীকে আটক করা হয়। এছাড়া, গত ১১ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে কদমতলীর হোটেল আল ইসলাম থেকেও তিন পুরুষ ও এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক হোটেলগুলোতে তরুণীদের সরবরাহ করতে বেশ কয়েকটি দালালচক্র সক্রিয় রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাকরি বা শিক্ষার প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েদের সিলেটে আনা হয়। পরে তাদের বাসা ভাড়া নিয়ে রাখা হয় এবং অর্থনৈতিক চাপে ঠেলে দেওয়া হয় অনৈতিক কাজে। অনেকেই নিরুপায় হয়ে এ কাজে যুক্ত হন। ফলে এই চক্র ভেঙে না দিলে সমস্যার মূল সমাধান সম্ভব নয়।
নগরীর অভিভাবক মহলে এ নিয়ে প্রবল উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মদিনা মার্কেট এলাকার এক অভিভাবক বলেন, “আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। তারা যদি এ ধরনের প্রলোভনে পড়ে যায়, তবে ধ্বংসের মুখে পড়বে। এ প্রবণতা তরুণ সমাজকে বিপথগামী করছে এবং সামাজিক অবক্ষয় বাড়াচ্ছে।”
সিলেটের মতো একটি আধ্যাত্মিক নগরীতে যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন তা কেবল স্থানীয় সমাজ নয়, বরং পুরো দেশের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলে। পর্যটননির্ভর এ শহরে বিদেশি ও দেশি ভ্রমণকারীরা আসেন আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজতে। কিন্তু আবাসিক হোটেলগুলোতে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে সিলেটের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে—এমন আশঙ্কা করছেন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেবল অভিযান চালিয়ে কিছু মানুষকে আটক করলেই হবে না। হোটেলগুলোর মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। প্রতিটি হোটেলে অতিথি প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নিয়ম আরোপ করতে হবে। সেই সঙ্গে দালালচক্র ভেঙে দেওয়া এবং তরুণ-তরুণীদের জন্য সুস্থ বিনোদন ও ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের সুযোগ বাড়াতে হবে।
এছাড়া পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তরুণদের নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধে দৃঢ় করে তুলতে আরও সক্রিয় হতে হবে।
আধ্যাত্মিকতার নগরী সিলেট আজ এক নৈতিক সংকটের মুখে। আবাসিক হোটেলগুলোতে অনৈতিক কাজের বিস্তার শুধু আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি নয়, বরং নগরীর আধ্যাত্মিক পরিচয় ও ভাবমূর্তির জন্যও গুরুতর চ্যালেঞ্জ। অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ তাই জোর দিয়ে বলছেন—এখনই সময় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার, যাতে এই নগরী তার প্রকৃত মর্যাদা ফিরে পায়।