এতিমখানায় দুর্নীতি: কাগজে ৩৮, বাস্তবে ৮ সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ

এতিমখানায় দুর্নীতি: কাগজে ৩৮, বাস্তবে ৮ সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ

১২ September ২০২৫ Friday ১:১৪:৩২ PM

Print this E-mail this


রাজাপুর ((ঝালকাঠি) প্রতিনিধি:

এতিমখানায় দুর্নীতি: কাগজে ৩৮, বাস্তবে ৮ সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ

ঝালকাঠির রাজাপুরে একটি এতিমখানায় ব্যাপক অনিয়ম ও সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম সাহিত্যিক অধ্যক্ষ মো. ইসমাইল হোসেন এতিমখানা। এটির অবস্থান উপজেলার উত্তর উত্তমপুর গ্রামে। কাগজ-কলমে প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৮ জন শিশু থাকলেও বাস্তব চিত্র অন্যরকম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এতিমখানাটিতে বড়জোর ৮ জন শিশু থাকে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সরকারি বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা শিশুদের খাদ্য, পোশাক এবং শিক্ষার পরিবর্তে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই এতিমখানায় ৩৮ জন এতিমের খাদ্য, পোশাক ও শিক্ষার জন্য প্রতিবছর দুই ধাপে প্রায় ৯ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত বসবাস করছে মাত্র ৬ থেকে ৮ জন। দুপুরের রান্নার কড়াইয়ে দেখা গেল মাত্র ৬টি ডিম। প্রতিদিন সেখানে সর্বোচ্চ ১৫ জনের রান্না করা হয় বলেও জানা গেছে।

প্রতিষ্ঠানের বাবুর্চি বলেন, ‘আমি দৈনিক সর্বোচ্চ ১২-১৫ জনের জন্য রান্না করি। কিন্তু দুপুরের খাবারের জন্য রান্না করা ছয়টি মুরগির ডিমই প্রমাণ করে, বাস্তবে কতজন শিশু রয়েছে। এতিমের সংখ্যা এত কম হওয়ায় বরাদ্দের অর্থের বেশির ভাগই অন্য কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।’

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, সরকার এতিমদের জন্য যে অর্থ দেয়, তা দিয়ে কর্তৃপক্ষ ভবন নির্মাণ, বাবুর্চি ও হুজুরের বেতন দেয়। নিজেদের উন্নয়ন করে; কিন্তু শিশুদের উন্নয়নমূলক কাজে নগণ্য অংশই ব্যয় হয়।

এক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এতিমখানায় আসলে কোনো পূর্ণাঙ্গ আবাসন ব্যবস্থা নেই। কাগজ-কলমে দেখানো হয়, সব শিশু এখানে থেকে পড়াশোনা করছে; কিন্তু অধিকাংশ সময় ভবন ফাঁকা থাকে।

প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকে আমরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি। প্রথমে কম থাকলেও ধাপে ধাপে বর্তমানে ৩৮ জনের জন্য বছরে ৯ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। কাগজে যা আছে, বাস্তবে তার চেয়ে এতিম কম। যারা ওখানে থাকে, তাদেরও অনেকে বাড়ি ফিরে যায় বা আর আসে না।’

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) ঝালকাঠি জেলা শাখার সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত এতিমদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

রাজাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল বলেন, বর্তমানে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। তাই প্রতিষ্ঠানে এতিমের সংখ্যা কম আছে। বরাদ্দ কমানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। বাকি অভিযোগগুলোও তদন্ত করে সত্যতা মিললে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা নেই না।’ পরবর্তী সময়ে যখন বলা হয়, সভাপতি বলছেন আপনাদের অফিস ম্যানেজ করতে হয়, তখন তিনি বলেন, ‘সভাপতি হয়তো নিজেকে রক্ষা করতে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।’

ঝালকাঠি সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহপার পারভীন বলেন, ‘উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে খোঁজ নিতে বলেছি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক


শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

Explore More Districts