নড়াইল শহর: দায়িত্বহীনতার স্থায়ী ঠিকানা!

নড়াইল শহর: দায়িত্বহীনতার স্থায়ী ঠিকানা!

নড়াইল শহর: দায়িত্বহীনতার স্থায়ী ঠিকানা!

অবৈধ নির্মাণ আর নিয়মবহির্ভূত বিল্ডিং
নড়াইল শহরের আরেকটি ভয়াবহ সমস্যা হলো অবৈধ ও অনিয়মতান্ত্রিক নির্মাণ কাজ। কোনো বাড়ির মালিকই পৌর আইন মেনে সম্পূর্ণভাবে ভবন নির্মাণ করেছেন—এমন নজির খুঁজে পাওয়া ভার। পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে থাকা নানা কমিটি থাকলেও প্রশ্ন রয়ে যায়—এই অনিয়ম কীভাবে চোখ এড়িয়ে গেল? নাকি এটাই তাদের ‘নিয়মিত চর্চা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে?

আয়-ব্যয়ের টানাপোড়েন: কর দিতে অনীহা
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত তাদের বাজেটপ্রাপ্তির পর নির্ধারিত পৌর কর পরিশোধ করে। তথ্যানুযায়ী, নড়াইল পৌর এলাকার সরকারি হাউজহোল্ডের প্রায় ৮০% কর পরিশোধ করে থাকেন, যেখানে সাধারণ নাগরিকদের কর পরিশোধের হার মাত্র ১৫-২০%। পানির বিল, পরিচ্ছন্নতা ফি, আবর্জনা অপসারণ ফি—এসব বিষয়েও অনীহা লক্ষণীয়।

জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দায় এড়ানো নয়
যেকোনো ভবন নির্মাণে পৌরসভার অনুমোদন কমিটি থাকার কথা, যেখানে প্রকৌশলী, পরিবেশবিদ, ফায়ার সার্ভিস প্রতিনিধি, সমাজকর্মী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এই কমিটিগুলো কতটুকু সক্রিয় ছিল? ‘প্রশাসনিক চাপ ছিল’, ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়েছে’, এসব অজুহাত দিয়ে দায়িত্ব এড়ানো চলবে না। জনগণের প্রশ্ন—এই অনিয়মের দায় শেষ পর্যন্ত কে নেবে?

নাগরিকদেরও দায়িত্ব আছে
এখন সময় এসেছে নিজেদের গা ঝাড়া দেওয়ার। যারা নাগরিক, তাদেরকেই আগে দায়িত্ব নিতে হবে। সরকার সবকিছু একা করতে পারবে না। কর না দিয়ে, নিয়ম না মেনে নাগরিক অধিকার চাওয়া যেমন অবৈধ, তেমনি জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বহীনতাও ক্ষমার অযোগ্য।

যদি আমরা নিজে সচেতন না হই, তাহলে একসময় এই অনিয়মের ভারেই শহরের মৌলিক কাঠামো ভেঙে পড়বে। তখন শুধু দোষারোপ করেই লাভ হবে না। ইতিহাস সাক্ষী—সাধারণ মানুষ যখন বুঝতে পারে, তখন কেউ রক্ষা পায় না।

উপসংহার
নড়াইল পৌরসভা আমাদের সবার। এটি শুধুমাত্র প্রশাসন বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একক দায়িত্ব নয়। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে কর দেওয়া, নিয়ম মেনে গৃহনির্মাণ করা, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
“জি স্যার” বলা থেকে বেরিয়ে এসে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, তাহলে নাগরিক অধিকার নিয়ে জোর গলায় কথা বলতেও পারবো। নয়তো সামনে অপেক্ষা করছে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি।

নড়াইল পৌরসভা: একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও প্রোফাইল
প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৭২
বিভাগ: খুলনা
জেলা: নড়াইল
শ্রেণি: ‘এ’ ক্যাটাগরির পৌরসভা

ইতিহাসের পটভূমি
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে নড়াইল পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি নতুন জাতির আত্মপ্রকাশের মুহূর্তে, শহরের নাগরিক কাঠামো গঠনের অংশ হিসেবে গড়ে ওঠে। স্থানীয় প্রশাসন ও নাগরিক সেবার মৌলিক কাঠামো প্রতিষ্ঠায় এটি ছিল জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ভৌগোলিক ও নাগরিক কাঠামো
আয়তন: প্রায় ১৪.৭৫ বর্গকিলোমিটার (প্রায়)
জনসংখ্যা: আনুমানিক ১.৫ লাখ
হাউজহোল্ড সংখ্যা: প্রায় ২০,০০০+
ওয়ার্ড সংখ্যা: ৯ (বা বর্তমান অনুযায়ী হালনাগাদ হতে পারে)

প্রশাসনিক কাঠামো
নড়াইল পৌরসভা একটি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বভিত্তিক কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর প্রশাসনিক শাখায় একজন পৌর মেয়র, কাউন্সিলরবৃন্দ এবং বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন।

মূল দায়িত্ব ও সেবা
নাগরিকদের পানি সরবরাহ
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচ্ছন্নতা
রাস্তা ও ড্রেনেজ অবকাঠামো
জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন
হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স প্রদান
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন
শহর পরিকল্পনা ও ভবন অনুমোদন

সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ
যদিও এটি একটি “এ ক্যাটাগরির” পৌরসভা, কিন্তু অবকাঠামো ও নাগরিক সেবায় এখনও রয়েছে অনেক ঘাটতি:
রাস্তাঘাটের দুরবস্থা
ড্রেনেজের অভাব
অপরিকল্পিত নির্মাণ
নাগরিক সচেতনতার ঘাটতি
কর প্রদানে অনীহা

🌱 ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
নড়াইল একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ শহর। নাগরিক অংশগ্রহণ, জবাবদিহিমূলক জনপ্রতিনিধিত্ব এবং টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে নড়াইল পৌরসভাকে একটি আধুনিক, বাসযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন শহরে রূপান্তর করা সম্ভব।

Explore More Districts