ধর্ম অনুশীলন সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা কমায় : ধর্ম উপদেষ্টা – দৈনিক আজাদী

ধর্ম অনুশীলন সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা কমায় : ধর্ম উপদেষ্টা – দৈনিক আজাদী

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, সমাজের প্রতিটি সদস্য যদি ধর্ম চর্চা ও ধর্ম অনুশীলনে মনোযোগী হয় তাহলে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে। এছাড়া ধর্মীয় মূল্যবোধ মানব চরিত্রকে উৎকর্ষের পূর্ণতায় অভিষিক্ত করে বলে তিনি উল্লেখ করেন। গতকাল শুক্রবার সকালে হাটহাজারীতে একটি মডেল মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, দুপুরে রাউজান ও বিকেলে রাঙ্গুনিয়ায় ২টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ তিনটি মসজিদ নির্মাণে প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে সারা দেশে ৫৬৪টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এ মসজিদগুলো সে প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হয়েছে।

ধর্ম উপদেষ্টা সকালে হাটহাজারী পৌরসভা এলাকায় হাটহাজারী উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন হাটহাজারী মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস আল্লামা শেখ আহমদ। উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক মাওলানা খলিল আহমদ কাসেমী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. . আউয়াল হাওলাদার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান ও প্রকল্প পরিচালক মো. শহীদুল আলম।

উপদেষ্টা দুপুরে রাউজানের মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন ও মসজিদে জুমার বয়ান করেন। এসময় তিনি বলেন, সরকার ১৩ কোটি টাকা খরচ করে এ মসজিদ নির্মাণ করে দিয়েছে। এখন মসজিদকে আবাদ রাখার দায়িত্ব এলাকাবাসীর। মসজিদভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে সমাজের সবাইকে নিয়মিত মসজিদমুখী হতে হবে। মসজিদকে সচল রাখতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে আদায় করতে হবে। কেননা নামাজ সকল ধরনের খারাপ কাজ থেকে মুক্ত রেখে মানুষের মধ্যে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করে, মূল্যবোধ সমুন্নত রাখে। সমাজের প্রতিটি সদস্য যদি ধর্ম চর্চা ও অনুশীলনে মনোযোগী হয় তাহলে অপরাধ প্রবণতা কমবে। ধর্মীয় মূল্যবোধ মানব চরিত্রকে উৎকর্ষের পূর্ণতায় অভিষিক্ত করে। তিনি বলেন, সরকারের সঠিক পদক্ষেপের কারণে চলতি বছর হজ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দেশের বিমানবন্দরে কোনো হাজি যেমন হয়রানির সম্মুখীন হননি তেমনি সৌদি আরবে গিয়েও কেউ বিড়ম্বনার শিকার হননি। কেউ হারিয়ে যাননি। এ ছাড়া এবার স্বল্পমূল্যে কাবার কাছাকাছি স্থানে হাজিদের জন্য ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছে। ফলে আমাদের খরচ কিছুটা কম হয়েছে এবং কিছু টাকা জমা রয়েছে। সব হাজি দেশে আসা শেষ হলে জমা টাকা ফেরত দেওয়া হবে। টাকা মেরে খাওয়ার জন্য আমরা ক্ষমতায় বসিনি।

পরে উপদেষ্টা মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। প্রথম দিনে মসজিদে খুতবা দেন ও জুমার নামাজে ইমামতি করেন হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার প্রধান মুফতি মো. জসীম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. . আউয়াল হাওলাদার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান ও প্রকল্প পরিচালক মো. শহীদুল আলম বক্তব্য দেন।

পরে বিকেলে রাঙ্গুনিয়ায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন ধর্ম উপদেষ্টা। মসজিদের ফলক উন্মোচন করে মসজিদের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, মসজিদটি এমন জায়গায় হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে খুশি হতে পারিনি। এটা উপজেলার কাছাকাছি হওয়া উচিত ছিল। অনেক জায়গায় আমি মসজিদ উদ্বোধন করে দিয়ে আসছি বিলের মধ্যে মসজিদ। এটা রাজনৈতিক কারণে হয়েছে। যেমন পেকুয়া, এত সুন্দর একটা উপজেলা কিন্তু মসজিদটি হয়েছে বিলের মাঝে। আশেপাশে কোনো বাড়িঘর কিছু নেই। তাহলে মুসল্লি পাবো কোথায়। অথচ ১২০০ মানুষ নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে। কেন ডিসি মহোদয় এটাতে দস্তখত করলেন। হয়ত পলিটিক্যাল প্রেসার ছিল। এটা যদি আরো কিছু টাকা বেশি খরচ হলেও প্রধান সড়কের পাশে করা যেত। এটার মাধ্যমে উপজেলার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেত। এটার নান্দনিক, ডিজাইন এবং স্থাপত্য কৌশল আলাদা। দূর থেকে দেখলে দৃষ্টিনন্দন দেখাবে। তারপরও মসজিদ যেখানে হয়ে গেছে, সেখানে আমরা আবাদ করব।

প্রকল্প ও মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়া এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুল ইসলাম, মসজিদের ভূমিদাতা ও চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, ঠিকাদার ফরিদুজ্জামান মিশু, রাঙ্গুনিয়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সুপারভাইজার মো. আবু তাহের ও মডেল মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো. আলমগীর।

সারা দেশে ৫৬৪টি মসজিদ সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, এসব মসজিদ এক পয়সাও বাইরের নয়। সব বাংলাদেশ সরকারের টাকা। মানুষ মনে করছে সৌদি আরব করে দিচ্ছে, এটা ভুল। পুরোটাই বাংলাদেশ সরকারের টাকা। বড় আকারে যাতে এই মসজিদে নামাজ আদায় হয় সেই আশা করছি।

মসজিদের এসি কম চালানোর অনুরোধ করে তিনি বলেন, মসজিদে কিছুক্ষণ এসি চালিয়ে ফ্যান চালালে অনেক্ষণ ঠাণ্ডা থাকে। এসি চালালে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। আমাদের বিল দিতে কষ্ট হয়। ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, এই মসজিদের মাধ্যমে আশেপাশে যত বাড়িঘর, পাড়া প্রতিবেশি আছে তাদের মধ্যে তৌহিদের আলো, সুন্নতে রাসূল (.) এর আদর্শের আলো প্রজ্জ্বলিত হবে, জাগ্রত হবে এটা আমরা আশা করি। সারাদেশে আমরা ৫৬৪টি মসজিদ নির্মাণে আমরা হাত দিয়েছি। এর মধ্যে সাড়ে ৩০০ হয়ে গেছে। দেড়শতের মতো বাকি আছে। একেবারে পঞ্চগড় থেকে শুরু করে টেকনাফ পর্যন্ত। উপজেলা মডেল মসজিদগুলো তিনতলা এবং জেলার মসজিদগুলো চারতলা বিশিষ্ট। ১৮টির মতো নদীর কিনারে উপকূলীয় মসজিদ প্রত্যন্ত এলাকায় করা হচ্ছে। যাতে দুর্যোগের সময় মানুষজন ওই মসজিদে আশ্রয় নিতে পারেন।

উল্লেখ্য, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে এবং গণপূর্ত অধিপ্তরের বাস্তবায়নে ৪৩ শতক জমির উপর ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মসজিদে একসাথে ১২০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। ১৩টি গাড়ি একসাথে পার্কিং করে রাখার সুবিধা রয়েছে। মাল্টিপারপাস ওয়ার্ক এখানে হবে। কোনো মানুষ মারা গেলে এখানে আধুনিক মানের গোসলের ব্যবস্থা আছে। অক্ষম মানুষের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা আছে। হেফজখানা আছে। কিচেন ও ডাইনিং ব্যবস্থা রয়েছে। দেড় থেকে দুইশত মানুষের সেমিনার করার জন্য এসি কনফারেন্স কক্ষ ব্যবস্থা, ইসলামিক রিসাচ সেন্টার, হজ বুকিং ব্যবস্থা, লাইব্রেরি ব্যবস্থা, মেহমান খানায় বিশিষ্টজনদের থাকার ব্যবস্থাসহ নানা সুবিধা রয়েছে এই মডেল মসজিদে।

Explore More Districts