লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১১৫৫ রোগীর বিনামূল্যে ছানি অপারেশন – দৈনিক আজাদী

লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১১৫৫ রোগীর বিনামূল্যে ছানি অপারেশন – দৈনিক আজাদী

কানাডিয়ান সংস্থা জেকো ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১ হাজার ১৫৫ জন দুস্থ ও গরিব রোগীর বিনামূল্যে ছানি অপারেশন করা হয়েছে। হাসপাতালের এসব কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছেন জেকো ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কোঅর্ডিনেটর ও লায়ন্স জেলা ৩১৫বি৩ বাংলাদেশের সাবেক গভর্নর লায়ন ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহিদুর রহমান আজাদ।

গতকাল রোববার দুপুরে নগরীর জাকির হোসেন রোডে লায়ন চক্ষু হাসপাতালের সিএলএফ কমপ্লেক্সের হালিমা রোকেয়া মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। বিনামূল্যে ছানি অপারেশনে জেকো ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন নাসির উদ্দীন চৌধুরী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কানাডিয়ান সংস্থা জেকো ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালের তত্ত্বাবধানে বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামীণ, দুর্গম পাহাড়ি ও উপকূলীয় অঞ্চলের অসহায়, দুস্থ ও অসচ্ছল ছানিপড়া রোগীদের লেন্স প্রতিস্থাপন করে দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে ধারাবাহিকভাবে আর্থিক অনুদান প্রদান করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত জেকো ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় তিন ধাপে প্রত্যন্ত গ্রামীণ, দুর্গম পাহাড়ি ও উপকূলীয় অঞ্চল থেকে হাসপাতালে এনে ১ হাজার ১৫৫ জন ছানিপড়া রোগীকে অপারেশনের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার করে সমাজে পুনর্বাসিত করতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা জানেন, চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশন মানবসেবায় চট্টগ্রামের লায়নদের একটি গর্বিত প্রতিষ্ঠান। শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠান মানবসেবার জন্য দেশে এবং দেশের বাইরে সমানভাবে সমাদৃত।

লায়ন নাসির উদ্দীন চৌধুরী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সব মহলের আন্তরিক সহযোগিতায় লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এই হাসপাতালকে একটি অত্যাধুনিক স্বয়ংসম্পূর্ণ চক্ষু হাসপাতাল এবং লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই হাসপাতালে আগত সকল রোগী আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো রোগী যেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা প্রদানে আমরা বদ্ধপরিকর। এই অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে চক্ষু চিকিৎসার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রচারে সহযোগিতা কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও সাবেক জেলা গভর্নর লায়ন এম এ মালেক বলেন, আমরা লায়নরা ১৯৯২ সালে এই চক্ষু হাসপাতাল করেছি বলেই আজকে গ্রামেগঞ্জে চক্ষু ক্যাম্প হচ্ছে। সেখানে সাধারণ জনগণ উপকৃত হচ্ছে। এটাই হচ্ছে লায়নদের কাজ। এই লায়নিজম আমাদেরকে অনেক কিছু শেখায়। এবার আমার কথা বলি। লায়নিজমে না এলে হয়তো এটি আমি করতাম না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যত অন্ধ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন তাদেরকে আমরা প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে দিই। আপনাদের জানাশোনার মধ্যেও যদি কেউ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অন্ধ শিক্ষার্থী থাকে, তাহলে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিবেন। আজাদী তাদের প্রতি মাসে টাকা দেবে। এটা আমাদের অঙ্গীকার। আর অন্যান্য জায়গায়ও যারা আছেন, আমাদের ক্ষুদ্র চেষ্টায় যতটুকু সম্ভব আমরা করি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লায়ন্স জেলা ৩১৫ বি৪ এর সাবেক গভর্নর লায়ন কামরুন মালেক এবং লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের সেক্রেটারি ডা. দেবাশীষ দত্ত।

সংবাদ সম্মেলনের পরে চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের ২০২৫ ও ২০২৬ মেয়াদের গভর্নিং বডির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিএলএফ কমপ্লেক্সের হালিমা রোকেয়া মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত সভায় ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা গভর্নর লায়ন নাসির উদ্দিন সভাপতিত্ব করেন। সভায় চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশন ও ফাউন্ডেশনের প্রকল্পসমূহের জন্য আগামী অর্থবছরের বার্ষিক বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।

খসড়া বাজেট পেশ করেন ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার লায়ন এস জোহা চৌধুরী। ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম ও ফাউন্ডেশনের প্রকল্প লায়ন্স দাতব্য চক্ষু হাসপাতালের প্রদত্ত মানসম্পন্ন চক্ষু চিকিৎসাসেবা প্রদান, চট্টগ্রাম লায়ন্স আই ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম এবং সাম্প্রতিক সময়ে কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন চক্ষু হাসপাতালে সেক্রেটারি ডা. দেবাশীষ দত্ত।

সভায় সাবেক গভর্নরবৃন্দের মধ্যে ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, লায়ন কবির উদ্দিন ভূঁইয়া, লায়ন এস এম সামশুদ্দিন, জেলা গভর্নর লায়ন কোহিনূর কামাল, সদ্য নির্বাচিত জেলা গভর্নর মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ অপু, ফাউন্ডেশনের ম্যানেজমেন্ট কমিটির এসোসিয়েট সেক্রেটারি লায়ন এস এম আশরাফুল আলম আরজু ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

Explore More Districts