আমরা আমাদের পোশাক কেলেঙ্কারি থেকে মুক্তি পেতে হোটেলের দিকে পা বাড়াতে যাব, এমন সময় পেছন থেকে বাবার ডাক, ‘আয় তো মা, তোদের আঙ্কেলের সঙ্গে একটা ছবি তুলে রাখি।’
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের মাথায় অনেক রকমের দৃশ্যের অবতারণা হতে থাকে। আমরা চিন্তা করতে থাকি কী করে এই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু ভাগ্যদেবী অপ্রসন্ন। আমাদের বিছানার চাদর-জড়ানো ছবিটা হোটেলমালিকের ফোনের মেমোরিতে আজীবনের জন্য জায়গা করে নেয়।
আমার সহজ-সরল বাবা বুঝতেও পারেন না তাঁর মেয়েগুলো কেন ট্যুরের বাকিটা সময় মুখ গোমড়া করে রেখেছিল।
মুখ গোমড়া করার কারণ অবশ্য আরও ছিল। পেশায় চিকিৎসক বাবা কোথাও ঘুরতে গেলে আমাদের সবার ডায়েটের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দিতেন। আমরা চাইতাম রাস্তার পাশের কার্টের ফুচকা-চটপটি খেতে, ফেরিতে উঠলেই আবদার করতাম ঝুড়ি মাথায় হাঁকতে থাকা মামার ঝুড়ির রহস্য উদ্ঘাটন করতে। ট্রেনে উঠলেই কেন জানি না, চোখের সামনেই বানিয়ে দেওয়া ঝালমুড়ি আর ‘গ্রাম চা’র লোভ সামলাতে পারতাম না। কিন্তু বাবার সঙ্গে ঘুরতে গেলে এর সবকিছুতেই কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিল। বাসা থেকে নিয়ে আসা ডিমসেদ্ধতেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হতো। বাবার মতে, শরীরই যদি ফিট না থাকে, ঘুরবি কী করে!
এখন বড় হয়েছি। থাকি দেশের বাইরে। দেশ-বিদেশের কত কত সূর্যোদয় যে নিজের ঝুলিতে ভরেছি বাবার শিখিয়ে দেওয়া মন্ত্র অক্ষরে অক্ষরে পালন করে, তার আর হিসাব রাখা হয়নি।
বাবা, রোমাঞ্চের নেশাটা যেন সব সময় তোমাকে এভাবেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে, এ কামনাই করি।