১৯ May ২০২৫ Monday ২:১৭:৫৬ PM | ![]() ![]() ![]() ![]() |
Warning: Trying to access array offset on null in /home/amdrbari/domains/amaderbarisal.com/public_html/wp-content/themes/newsbee/news.php on line 6
পিরোজপুর প্রতিনিধি:

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পিরোজপুর সদর উপজেলার কলাখালি গ্রামের সোহেল সরদারের সরদার এগ্রো ফার্মে প্রস্তুত হয়েছে একটি ব্যতিক্রমী গরু। কুচকুচে কালো ছয় ফুট উচ্চতা, আট ফুট লম্বা ও ছয় বছর বয়সের ২৫ মন ওজনের গরুটি যেমন বলবান, তেমনি তেজ।
বলবান এবং নবাবী আচরণের জন্য মালিক সোহেল সরদার আদর করে নাম রেখেছেন ‘বীর বাহাদুর’। এরই মধ্যে গরুটি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশাল আকৃতির ষাঁড়টি দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা ও ব্যবসায়ীরা। ষাঁড়টির মালিক সোহেল সরদারের দাবি, এটি জেলার সবচেয়ে বড় গরু। গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে আট লাখ টাকা।
‘বীর বাহাদুর’কে ঢাকার একটি হাট থেকে তিন বছর বয়সে শখ করে কিনে আনেন মালিক। এরপর দীর্ঘ তিন বছর ধরে ফার্মে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে লালন-পালন করা হয়েছে গরুটিকে। বীর বাহাদুরের দৈহিক গঠন যেমন চমকপ্রদ, তেমনি তার স্বভাবও আলাদা।
শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান এই গরুটিকে সামলাতে কখনো কখনো লেগে যায় ৫ থেকে ১০ জন লোক। এ খামারে ‘বীর বাহাদুর’সহ গরুর সংখ্যা ১২টি, যা পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন খামারের মালিক। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় বীর বাহাদুর। ফার্মে ঢুকতে প্রথমেই আলাদাভাবে পরিচর্যা করা হয় তাকে।
সারা দিন ফার্মের ভেতরেই দিন কাটে তার। দিন রাত চালিয়ে রাখতে হয় ফ্যান ও লাইট। বাহাদুরের খাদ্য তালিকায় রয়েছে শুকনো খড়। তাছাড়া খৈল, কলা, ভুসি ও ভুট্টা। তার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন কাঁচা ঘাসও রয়েছে। গরমের মধ্যে তাকে গোসল করানো হয় দিনে দুই থেকে তিনবার।
গরুটির মালিক সোহেল সরদার বলেন, বীর বাহাদুরের যত্নে কোনো কমতি রাখা হয়নি। সন্তানের মতো লালনপালন করা হয়েছে। ওর গায়ে এক ফোঁটা কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করিনি। গরুটিকে খাওয়ানো হয় শুধু প্রাকৃতিক খাবার ঘাস, খৈল, কলা, ভুসি ও ভুট্টা।
কোনো রকম কৃত্রিম ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি। ফলে বীর বাহাদুর এখন সুস্থ, সবল এবং আকর্ষণীয় এক পশুতে রূপান্তরিত হয়েছে। এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বিক্রির জন্য তাকে প্রস্তুত করছি। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে এটি আমি বিক্রি করতে চাই। বীর বাহাদুরের ওজন ২৫ মণ। এটি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু।
তিনি বলেন, আমি বীর বাহাদুরকে বিক্রির জন্য ৮ লাখ টাকা দাম চাচ্ছি। ইচ্ছা আছে বীর বাহাদুরকে ঢাকার যেকোনো একটি হাটে নিয়ে যাব। তবে ভালো ক্রেতা পেলে বাড়ি থেকে দাম কম-বেশি করে বিক্রি করে দেব। আল্লাহ যাকে রিজিক দিয়েছেন, তিনিই বীর বাহাদুরকে নিয়ে যাবেন।
গরুটির পরিচর্যাকারী মো. রাজীব ডাকুয়া বলেন, গরুটিকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার দেওয়া হয়। সকালে ৮ কেজি সাইলেজ, পরে ভুসি, এংকর ডাল, ভুট্টা, চালের কুড়া খাওয়ানো হয়। তিনবেলা গোসল করানো হয়। গরুটির সঙ্গে আমার বন্ধুর মতো সম্পর্ক হয়ে গেছে ওর কাছে গেলেই আমার আদর নিতে চায় আমিও সেভাবে যত্ন করি।
ফার্মের পার্শ্ববর্তী জিন্নাত আলী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশা ইসলাম বলেন, আমাদের স্কুলের পাশের ফার্মে বীর বাহাদুর নামের একটা গরু আছে নামের সঙ্গে গরুর আচার আচরণ সব মিলে যায়। আমরা স্কুলে যাওয়া আসার পথে একটু সময় নিয়ে গরুটিকে দেখি। এত বড় গরু সচারাচর দেখা যায় না। এ বছর কোরবানিতে গরুটি বিক্রি করা হবে আমাদের গরুটির জন্য মায়া লাগছে।
পিরোজপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. সুদেব সরকার বলেন, পিরোজপুর জেলায় যেসব খামারিরা গরু মোটা তাজাকরণ করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কলা খালি গ্রামের সোহেল সরদারের সরদার এগ্রো ফার্ম। সেখানে ২৫ মণ ওজনের বীর বাহাদুর নামে একটি গরু রয়েছে। পিরোজপুরের মধ্যে এখন পর্যন্ত এটি আমার জানামতে সবচেয়ে বড় গরু। গরু মোটা তাজা করন খামারে প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়।
পিরোজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া বলেন, এ বছর এ জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৪০ হাজার ২৫৭টি। পশু প্রস্তুত রয়েছে ৪৬ হাজার ৯৩৫টি। উদ্বৃত্ত বা বাড়তি পশু রয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৬৭৮টি, যা এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে জেলার ছোট বড় প্রায় ৫৩ হাজার বিভিন্ন জাতের পশুর খামার থেকে কোরবানিযোগ্য ৪৬ হাজার ৯৩৫টি পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ষাঁড় ও গাভী গরু মিলিয়ে রয়েছে মোট ২৬ হাজার ৯২০ টি, মহিষ রয়েছে ২১০টি, ছাগল রয়েছে ১৭ হাজার ৭০০টি, ভেড়া রয়েছে ১৮ হাজার ৮৭টি এবং অন্যান্য কোরবানি যোগ্য পশু রয়েছে ৮টি। জেলায় পশুর সিংহভাগ নদীপথে বা সড়কপথে ঢাকা কিংবা নিকটস্থ বিভাগীয় শহরে নিয়ে বিক্রয় করেন খামারিরা।
এক্ষেত্রে তারা কিছুটা বেশি মুনাফা পাবেন। এছাড়া পিরোজপুর জেলায় যে পরিমাণ কুরবানির পশু মজুদ আছে, তাতে প্রায় ২১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবছর শুধু পবিত্র ঈদুল আজহায় যে পরিমাণ পশুর চামড়া উৎপাদিত হয় তা বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ বিলিয়ন ডলার আয় করে।
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |