শুভব্রত আমান/
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর হয়ে ভারতের মসুর ডাল আমদানিতে গত ১০ মাসে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা গেছে।
বন্দরটির রাজস্ব শাখার তথ্যে জানা গেছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আমদানি ১,৭৬৭ টন কমে এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বিশাল ব্যবধান।
আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য কয়েকটি দেশ থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রচুর মসুর ডাল আসে। এ কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বর্তমানে পর্যাপ্ত মসুর ডালের স্টক রয়েছে।
তবে দিনাজপুরের হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫০টি ট্রাকে ২,০৪৫ টন মসুর ডাল এসেছে।
দ্রষ্টব্য, সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় মার্চের পর থেকে সবজির কোন তীব্র ঘাটতি দেখা যায়নি। সাধারণত সবজির অভাবে দুপণজাতীয় পণ্যের চাহিদা বাড়লেও, এবারে শাকসবজি পর্যাপ্ত থাকায় ডালের চাহিদা কমেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, ডালজাতীয় পণ্যের মধ্যে মসুর ডালই সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়। দেশে বার্ষিক প্রায় ৭০০,০০০ টন মসুর ডালের চাহিদা রয়েছে, যার ৩০% (প্রায় ২০০,০০০ টন) দেশে উৎপাদিত হয়; বাকি ৭০% (৫০০,০০০ টন) আমদানি করে পূরণ করা হয়।
জুলাই-এপ্রিল সময়ে ভোমরা বন্দরের মাধ্যমে ৬২২ টন মসুর ডাল আমদানি করা হয়, যার মূল্য দাঁড়ায় ১০.১১ কোটি টাকা। অথচ আগের বছরের একই সময়ে এখানে এসেছে ২,৩৮৯ টন ডাল, যার দাম ছিল ৩৬.১১ কোটি টাকা।
ভোমরা স্থলবন্দরের কৃষি আমদানি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গনি অ্যান্ড সন্সের ব্যবস্থাপক অশোক কুমার বলেন, “আমদানির পরিমাণ বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভর করে। স্থানীয় চাহিদা কমে আসায় অনেক প্রতিষ্ঠানের আমদানি হ্রাস পেয়েছে।”
এনবিআরের আরও তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে মসুর ডাল আমদানি বেড়েছে ৭২%—শুধু এ সময়ে এসেছে ২২০,০০০ টন, যেখানে একই সময় ২০২৩–২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১২৮,০০০ টন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব থেকে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে দেশীয় উৎপাদিত মসুর ডালের পরিমাণ ছিল ১৮৪,০০০ টন, যা আগের বছরের চেয়ে ১২,০০০ টন কম।
বাজার দর স্থিতিশীল
আমদানির হ্রাস সত্ত্বেও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মসুর ডালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সাতক্ষীরা, নড়াইল ও কুষ্টিয়ার কয়েকটি ডাল ও মসলাজাত বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।
গতকাল সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সুলতানপুর বড়বাজারের ঠাকুর স্টোরে আপনি দেখা যাবে, আমদানি করা সূক্ষ্ম মসুর ডালের মূল্য হয়েছে প্রতি কেজি ১৩০ টাকা, আর মোটা মসুর ডালের দাম হয়েছে ১০০ টাকা।
স্টোরের মালিক দুলাল চন্দ্র সাহা জানান, “প্রায় এক থেকে দেড় মাস ধরে ডালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।”
সাতক্ষীরা জেলার কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এসএম আব্দুল্লাহও নিশ্চিত করেছেন, সব ধরনের মসুর ডালের বাজার মূল্য গত ছয় সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল আছে। কুষ্টিয়ার বড় বাজারেও এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা একই কথা জানিয়েছে।