তালতলীতে অগ্নিকাণ্ডে ১৮ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ৪ বসতঘর ভস্মীভূত

তালতলীতে অগ্নিকাণ্ডে ১৮ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ৪ বসতঘর ভস্মীভূত

১৪ April ২০২৫ Monday ৪:২৮:০৮ PM

Print this E-mail this


তালতলী ((বরগুনা) প্রতিনিধি:

তালতলীতে অগ্নিকাণ্ডে ১৮ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ৪ বসতঘর ভস্মীভূত

বরগুনার তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া বাজারের ১৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ৪টি বসতঘর ও একটি পিকআপ আগুনে পুড়ে গেছে।

আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাত সোয়া ১২টার দিকে উপজেলার কড়াইবাড়িয়া বাজারে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীকে নগদ ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তালতলী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অপেশাদার কর্মকাণ্ডের কারণে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরে আমতলী ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।তালতলী ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেছেন তারা। অগ্নিকাণ্ডে অন্তত সাড়ে ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম সিকদার পনু।

জানা গেছে, তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া বাজারে সোমবার রাত সোয়া ১২টার দিকে বশির খাঁনের তেলের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু তারা মেশিনের তেল নিয়ে না আসায় এক ঘণ্টা মেশিন চালু করতে পারেনি।
ততক্ষণে বাজারের বেশ কিছু ঘর পুড়ে গেছে।

পরে আমতলীর ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও স্থানীয়রা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে বাজারের মাজেদা বেগম, সবুজ প্যাদা, রাব্বি প্যাদার বসতঘর এবং মিজান আকন, ফয়সাল, নির্মল শীল, কাইয়ুম মৃধা, মনির শীল, নাসির খাঁন, খবির টেইলার্স, হানিফ হাওলাদার, ছত্তার হাওলাদার, ফারুক ঘরামী, বশির খাঁন, হারেস খাঁন, মহিবুল্লাহ, আলমগীর প্যাদা, হানিফ সিকদার, হাবিব মোল্লা, রহিম কাজী ও সবুজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। একই সময়ে বাজারের পাশে সাইফুল খাঁনের একটি পিকআপ গাড়ি ছিল সেটিও পুড়ে গেছে।

ব্যবসায়ী বশির খাঁন বলেন, ‘জীবনে যা আয় করেছি। তা এক নিমিশে শেষ হয়ে গেল। আর কিছুই রইল না। পরিবার পরিবজন নিয়ে এখন পথে বসতে হবে। আমার দোকানে ১৬ ব্যারেল পেট্রল, দুই শ বস্তা চাল ও ক্যাশ বাক্সে চার লাখ টাকা ছিল। তা সমুদয় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’

হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী মহিবুল্লাহ বলেন, ‘অন্তত অর্ধ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো পথ নেই। তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মেশিন চালু করতে এক ঘণ্টা গলেছে। ততক্ষণে সব পুড়ে গেছে।আমতলী ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা না আসলে বাজারের কিছুই থাকত না।’ তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবি করেন তিনি। কাপড় ব্যবসায়ী মিজান আকন বলেন, ‘দোকানের সব পুড়ে চাই হয়ে গেছে। দোকানে অন্তত ৫০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। এখন কিছুই নেই।’

বাজারের আরেক কাপড় ব্যবসায়ী নাসির খাঁন বলেন, ‘কালকে ছিলাম ধনী আজকে আমি ফকির। আমার কিছুই রইল না। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের গাফলতির কারণে বাজারের এত বড় সর্বনাশ হয়েছে।’কড়াইবাড়িয়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কবির আকন বলেন, ‘প্রথমে একটি তেলের দোকান থেকে আগুনে সূত্রপাত ঘটে। পরে আগুন আশপাশের দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তালতলী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তাকে খবর দেওয়া হলে তাদের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে বিলম্ব করেন।

এ ছাড়াও তাদের যান্ত্রিক ত্রুটি থাকায় আগুন নেভাতে ব্যর্থ হন। ততক্ষণে আগুনে ১৯টি দোকান ও ৪ বসতঘর পুড়ে যায়। এতে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ সময় তালতলী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

অভিযোগ অস্বীকার করে তালতলী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা এস. এম. নুরুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। কিন্তু পানি সংকট থাকায় আগুন নিবারণে বিঘ্ন ঘটে। পরে আমতলী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। কিভাবে আগুনে সূত্রপাত হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা বলেন, ‘খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্দেশনা দিয়েছি। স্থানীয়রা তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের গাফলতির অভিযোগ দিয়েছেন।তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আপাতত প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীকে নগদ ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক



শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

Explore More Districts