১০ বছরে উৎপাদন কমেছে ৮০ শতাংশ, দাম বেড়েছে তিনগুণ – দৈনিক আজাদী

১০ বছরে উৎপাদন কমেছে ৮০ শতাংশ, দাম বেড়েছে তিনগুণ – দৈনিক আজাদী

বাজার চাহিদা না থাকায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে লাল সেমাই কিংবা বাংলা সেমাই। এক সময় ঈদে অতিথি আপ্যায়নে বাংলা সেমাইয়ের জুুড়ি ছিল না। বাংলা সেমাই দিয়ে নানা মজাদার রেসিপি তৈরি করা হতো। কিন্তু বিভিন্ন নামিদামী ব্র্যান্ডের সেমাই কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে গত ১০ বছরে বাংলা সেমাইয়ের উৎপাদন কমেছে ৮০ শতাংশ। অপরদিকে এই সময়ের মধ্যে দামও বেড়েছে তিনগুণ। চাক্তাইরাজখালী এলাকার বাংলা সেমাইয়ের কারখানা মালিকরা বলছেন, প্রতি বছরই বাংলা সেমাইয়ের চাহিদা কমছে। আগে চাক্তাইয়ে দেশের উত্তরবঙ্গ থেকেও আমরা বাংলা সেমাইয়ের অর্ডার পেতাম। এছাড়া চট্টগ্রামের আশপাশের জেলাগুলো থেকেও অর্ডার আসতো। বর্তমানে অবস্থা একেবারে নাজুক। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়া আর কোথাও বাংলা সেমাইয়ের বাজার নাই। গতকাল চাক্তাইরাজাখালীর কয়েকটি সেমাইয়ের কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, কারখানার শ্রমিকেরা বাঁশের মাথায় সেমাই ঝুলিয়ে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। অনেকে সেমাই তৈরির খামি আগুনে দিচ্ছেন। রোদে ভালোভাবে সেমাই শুকানো শেষে তেলে ভাঁজার পরে প্রস্তুত করা হচ্ছে সেমাই। তবে এখন খোলা সেমাইয়ের চাহিদা কমার কারণে অনেকে খোলা লাচ্চা সেমাই তৈরির দিকে ঝুঁকছেন। বাজারের প্যাকেটজাত লাচ্চা সেমাইয়ের কাছে বারবার বাজার হারাচ্ছেন কারখানা মালিকরা।

জানা গেছে, চাক্তাই ও রাজাখালীতে এক সময় আমরিন সেমাই, সোনার মদিনা সেমাই, জমজম সেমাই, আঙুর ব্র্যান্ড, হরিণ ব্র্যান্ড, ভাই ভাই ব্র্যান্ড, কেবি ব্র্যান্ড, দুই আমসহ আরো কিছু কারখানা সেমাই উৎপাদন করতো। কিন্তু প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে কারখানা মালিকরা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। তাই কারখানার সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩৫ কেজির টুকরি সেমাইয়ের দাম পড়ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮৫০ টাকা। আগে যেখানে কারখানাগুলো দৈনিক গড়ে একশত মণ করে উৎপাদন করতো, এখন সেটি কমে এসেছে মাত্র ১৫২০ মণে। অন্যদিকে ময়দার দামও দিন দিন বাড়ছে।

চাক্তাইরাজখালী এলাকার সেমাই কারখানার মালিকরা বলেছেন, আজ থেকে ২০ বছর আগেও ৪০টির বেশি সেমাই কারখানা ছিল। পর্যায়ক্রমে বন্ধ হতে হতে এখন মাত্র ৫৬ টিতে এসে ঠেকেছে। যেসব কারখানা উৎপাদনে রয়েছে তারাও আবার খুব একটা ভালো নেই। বিভিন্ন নামিদামী ব্র্যান্ড এখন আকর্ষণীয় মোড়কে সেমাই বাজারজাত করছে।

রাজাখালীর সেমাই কারখানার মালিক মো. নাজিম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের উৎপাদন একদম কমে গেছে। কারণ আগের মতো বাজারে ক্রেতা নেই। প্রতি বছর কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারখানার খরচের সাথে আয়ের সামঞ্জস্যতা নেই। এছাড়া সেমাই তৈরির প্রধান উপকরণ ময়দার দামও বেড়েছে।

রাজাখালী এলাকার অপর সেমাই কারখানার মালিক মোহাম্মদ আকবর দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রতি বছর আমাদের সেমাই উৎপাদনে খরচ বাড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় বিক্রি নাই। বাংলা সেমাইয়ের কারখানা মালিকরা কোনো মতে টিকে আছেন।

Explore More Districts