বরগুনায় ১২৮ হাসপাতালের একটিতেও নেই ব্লাড ব্যাংক, রক্তের জন্য স্বজনদের আহাজারি

বরগুনায় ১২৮ হাসপাতালের একটিতেও নেই ব্লাড ব্যাংক, রক্তের জন্য স্বজনদের আহাজারি

২০ February ২০২৫ Thursday ৬:৩৩:৩৮ PM

Print this E-mail this


বরগুনা প্রতিনিধি:

বরগুনায় ১২৮ হাসপাতালের একটিতেও নেই ব্লাড ব্যাংক, রক্তের জন্য স্বজনদের আহাজারি

বরগুনা জেলার ১২২টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ৬টি সরকারি হাসপাতালের একটিতেও নেই ব্লাড ব্যাংক। এতে জনে জনে খোঁজ করে রক্ত ব্যবস্থা করতে হচ্ছে মুমূর্ষু রোগীর স্বজনদের। পরিচিতজনদের কাছে রক্ত না পেলে খোঁজ করতে হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো রক্তের জোগান দিলেও সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় অনেক সময় রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে পূর্ণাঙ্গ ব্লাড ব্যাংক চালু করা যাচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে রয়েছেন জেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বরগুনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রতি মাসে ২০০ ব্যাগেরও বেশি রক্তের প্রয়োজন হয়। এছাড়া জেলায় সিজারিয়ান ও অন্যান্য সার্জারি মিলিয়ে মাসে প্রায় ৫০০টির মত অপারেশন হলেও প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়ছেন রোগীরা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রক্ত সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের একমাত্র ভরসা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। স্বেচ্ছাসেবকরা চেষ্টা করলেও সবসময় সময়মতো কাঙ্ক্ষিত রক্ত পাওয়া যায় না বলে জানা গেছে।

সরজমিনে বরগুনা সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, রক্ত নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্বজনরা। কেউ রক্ত দিতে এসেছেন, কেউবা রক্ত নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। এদিকে প্যাথলজিতে চলছে দৌড়ঝাঁপ। রক্তের অভাবে কেউ ছুটছেন আত্মীয়-স্বজনের কাছে, কেউবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাহায্য চাইছেন। বিশেষ করে রাতের বেলায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠে। এছাড়া নেগেটিভ গ্রুপের পেতে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। ব্লাড ব্যাংক না থাকায় সময়মতো রক্ত দিতে ও রক্ত নিতে পারছেন না রোগী এবং রক্তদাতারা। সদর হাসপাতালে প্রতিদিন থ্যালাসেমিয়া, সিজারিয়ান ও সার্জারি বিভিন্ন রোগী ভর্তি থাকে। এজন্য প্রতিদিনই রক্ত দিতে হাসপাতালে আসেন বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বরগুনা জেলায় কোন ব্লাড ব্যাংক না থাকায় অনেক সময় সিজারিয়ান রোগীদের রক্ত দেওয়ার পর সেই রক্ত না লাগলে রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগের অভাবে ফেলে দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় গভীর রাতে কারো রক্তের প্রয়োজন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় রক্ত দাতাদের গন্তব্যে পৌঁছতে বিলম্ব হয়। তাই বরগুনায় একটি ব্লাড ব্যাংক অথবা রক্ত সংরক্ষণের জন্য হাসপাতালে ফ্রিজ স্থাপনের দাবি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর।

সদর উপজেলার ঢুলুয়া গ্রামের নাঈম নামের এক রোগীর স্বজন জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ডাক্তার বলেছেন রক্ত লাগবে। তাই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও আমার স্বজনদের ফোন দিয়েছি। এখনো রক্ত জোগাড় হয়নি । হাসপাতালে যদি একটা ব্যবস্থা থাকতো তবে আমাদের এই দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘুরতে হতো না।

থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু সন্তান নিয়ে হাসপাতালে আসা সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমার সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। অনেক সময় ২৬ দিন পরে আবার কখনো দুই মাস পর পর তাকে রক্ত দিতে হয়। আমি সব সময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে রাখি। যদি ব্লাড ব্যাংক থাকতো তবে আমাদের রক্তের জন্য কষ্ট অনেকটাই কমে যেতো।

রক্ত নিয়ে কাজ করা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক আতিকুর রহমান সাবু বলেন, রক্ত নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকদের প্রায়ই রাতের বেলায় সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা চেষ্টা করি ডোনারদের সঙ্গে যোগাযোগ করার। অনেক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ব্যর্থ হই। আবার অনেক সময় ডোনারদের বাড়িতে গিয়ে নিয়ে আসতে হয়। এতে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়। সিজারিয়ান রোগীর জন্য রক্ত দেওয়ার পরে অনেক সময় লাগে না। তখন সেটি ফেলে দেওয়া হয়। এটি আমাদের কষ্ট দেয়। ব্লাড ব্যাংক থাকলে রক্ত সংরক্ষণ করা যেত এবং অন্য রোগীকে কে দেওয়া যেত।

সেচ্ছাসেবী সংগঠন উৎসর্গ ফাউন্ডেশনের বরগুনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইদুর সিকদার বলেন, আমাদের নিয়মিত রক্তদাতা আছে দুই শতাধিক। রক্তদাতাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে যখন রক্ত দানের সময় হয় তখন রোগী পাওয়া যায় না। আবার যখন রোগীর রক্তের প্রয়োজন হয় তখন দাতা পাওয়া যায় না। ব্লাড ব্যাংক করা হলে সময় মতো প্রত্যেক ডোনার সেখানে রক্ত দান করতে পারতেন। রোগীরাও প্রয়োজনমতো সেখান থেকে রক্ত গ্রহণ করতে পারতেন।

ব্লাড ব্যাংক হলে এক ব্যাগ রক্ত ৭-২৮ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় জানিয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কল্পনা দত্ত বলেন, আমাদের এখানে পূর্ণাঙ্গ ব্লাড ব্যাংক না থাকার কারণ হচ্ছে জনবল, ফ্রিজ এবং বিদ্যুৎ। পূর্ণাঙ্গ ব্লাড ব্যাংক হলে এক ব্যাগ রক্ত ৭-২৮ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেত। হাসপাতালে প্রচুর থ্যালাসেমিয়া রোগী আসে। তারা ডোনার নিয়ে আসে। অনেককে রক্তদাতার জন্য ঘুরতেও দেখি কিন্তু আমাদের কিছু করার থাকেনা। আবার রোগীদের রক্ত দিতে গেলে অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়, তাই পরে দিতে হয়। রক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় সেই রক্তটি নষ্ট হয়ে যায়।

এ বিষয়ে বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ কে এম নজমুল আহসান বলেন, পূর্ণাঙ্গ ব্লাড ব্যাংক চালুর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল না থাকায় কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। যদি একটি রেফ্রিজারেটরও থাকতো তবে ডোনারদের কাছ থেকে অথবা রক্ত ডোনেশনের ক্যাম্প থেকে রক্ত সংরক্ষণ করে রোগীদের সরবরাহ করা যেত।

তিনি আরও বলেন, এখন শুধু ডোনারদের ওপর নির্ভর করেই আমাদের চলতে হচ্ছে। ডোনারদের থেকে রক্ত গ্রহণ করে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। একটি রেফ্রিজারেটর পেলে সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করি।

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক



শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

Explore More Districts