ফুল চাষে সফল উদ্যোক্তা আব্দুর রশিদ

ফুল চাষে সফল উদ্যোক্তা আব্দুর রশিদ

ইউএসএআইডির অর্থায়ন স্থগিতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এবং ব্র্যাক, কেয়ারসহ অনেক এনজিও উভয় সংকটে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখনই কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

বিশেষ কতগুলো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের আস্থায় পরিণত হওয়া আইসিডিআর,বি’র বেশ কিছু প্রকল্প চলমান ইউএসএআইডির অর্থায়নে। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে সহশ্রাধিক কর্মীকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ ধরিয়ে দিয়েছে। চাকরিচ্যুতরা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত বেতন-ভাতা প্রাপ্য হবেন বলে জানা গেছে।

আইসিডিডিআর,বি সিনিয়র ম্যানেজার (কমিউনিকেশন্স) একেএম তারিফুল ইসলাম খান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্প ও গবেষণাসমূহ পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত স্থগিত রেখেছি। আমাদের সেবা গ্রহীতা, বিভিন্ন অংশীদার ও সহকর্মীদের অসুবিধার জন্য সহানুভূতি ও দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা পুনরায় আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি।

কতগুলো প্রকল্প ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে আসছিল, আর ঠিক কত সংখ্যক কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে- কৌশলগত কারণে এসব বিষয়ে তথ্য দিতে অপারগতা জানিয়েছেন তিনি।

তবে বিভিন্ন উৎস থেকে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় দেড় শতাধিক চলমান প্রকল্পের মধ্যে ১০টির মতো প্রকল্প সরাসরি ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে আসছিল। আরও কিছু প্রকল্পের তহবিল অন্য মাধ্যম হয়ে আইসিডিআর,বি’তে আসতো।

প্রতিষ্ঠানটির জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) নিয়ে সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলে যাদের চিকিৎসা চলমান ছিল তাদের পরিণতি কি হবে! তাদের পরবর্তী ডোজের ওষুধ কিভাবে সরবরাহ হবে এমন সব কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি রয়েছে প্রকল্পটি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র লোকজন এই প্রকল্পের মাধ্যমে ফ্রি ওষুধ পেয়ে আসছেন। যাদের কিনে খাওয়ার মতো অবস্থা নেই, সেসব রোগীর পরিণতি কি হবে।

আইসিডিডিআর,বি প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ২০২০ সালে মারা গেছে ৪৪ হাজার জন, যা ভয়ঙ্কর করোনা মহামারিতে নিহতের চেয়েও বেশি।

নিহতের ওই পরিসংখ্যান হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক রোগী মারা যান যার কারণই অজানা থেকে যায়। সে কারণে নিহতের সংখ্যা বিবেচনায় যক্ষ্মা নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে। সেই রোগ নিরাময়ে ফ্রি ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র দিয়ে আসছিল আইসিডিডিআর,বি। এখন বড় জটিলতা হচ্ছে, অনেক রোগীর চিকিৎসা মাঝপথে রয়েছে। তারা যদি পরের মাসের ওষুধ নিতে এসে না পান তাহলে কি হবে। ২০৩৫ সালে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রার কি হবে!

অন্যদিকে বাংলাদেশে পরিচালিত এনজিওগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন পেয়ে থাকেন ব্র্যাক ও কেয়ার। ব্র্যাক এবং কেয়ারের মতো আরও অনেক এনজিও রয়েছে যারা ইউএসএআইডির অর্থায়নের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। তাদের অনেক চলমান প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে পুরোপুরি অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

মহাখালীতে অবস্থিত কেয়ার বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ে (রাওয়া সেন্টার) গেলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি কমিউনিকেশন বিভাগের কারও সাক্ষাৎ পাওয়াও সম্ভব হয় নি। অভ্যর্থনা কক্ষে থাকা এডমিন সাপোর্ট অফিসার খালেদা আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ইউএসএআইডি ইস্যুতে কথা বলা নিষেধ রয়েছে। কান্ট্রি ডিরেক্টর সরাসরি কথা বলতে নিষেধ করে দিয়েছেন। যে কারণে কেউই কথা বলতে পারবেন না। কোন মতামত নিতে গেলে আপনাকে মেইল করতে হবে।

পরে মেইল করলেও তাদের কোন সাড়া পাওয়া যায় নি।

অন্যদিকে ব্র্যাকের লিড এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন্স মামুনুল হককে ফোন করা হলে তিনি ব্র্যাকের একটি সংক্ষিপ্ত অফিসিয়াল বার্তা দিয়েছেন। লিখিত ওই বার্তায় বলা হয়েছে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা কোন মন্তব্য করতে পারছি না। সার্বিক অবস্থা কি দাঁড়ায় তা দেখার পর আপনাকে জানাবো।

তবে আইসিডিডিআর,বি’র বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ে শঙ্কা দেখছেন না কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা আইসিডিডিআর,বি’র এই খাতটি পুরোপুরি লাভজনক। আয় থেকে পরিচালন ব্যয় মেটানোর পর উদ্বৃত্ত থেকে যায়। সেই অর্থ দিয়ে ভর্তি রোগীর চিকিৎসার অর্থায়ন নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটি। মহাখালীতে অবস্থিত হাসপাতালটি বাংলাদেশের সম্ভবত একমাত্র হাসপাতাল যারা কোন ডাইরিয়ার রোগীকে ফেরান না। হাসপাতালে গেলেই তাকে ভর্তি করে নেওয়া হয়, প্রয়োজনে করিডোর এবং মাঠে অস্থায়ী শেড স্থাপন করে চিকিৎসা দিয়ে আসছে।

হাসপাতালটির সর্বোচ্চ সংখ্যক পরীক্ষার আন্তর্জাতিক মানদন্ড সনদ (আইএসও) রয়েছে। ১৮০টি প্যারামিটারে প্রায় ৭০০টি টেস্টের আইএসও সনদ পেয়েছে। যা বাংলাদেশের অন্যান্য হাসপাতালের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০টির মধ্যে সীমাবদ্ধ। কোয়ালিটির কারণে অনেক রোগী অন্য হাসপাতালে টেস্ট করালেও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আইসিডিডিআর,বি’র দ্বারস্থ হয়ে থাকেন।

১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সংস্থাটিতে প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারী রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদেশি সহায়তার পরিমাণ ৬৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু ইউএসএআইডির জন্য প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় দ্বিতীয়বার বসার পরপরই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তা স্থগিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংস্থাটিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করতে চাচ্ছে তার নতুন প্রশাসন। কর্মকর্তাদের ওয়াশিংটনে ইউএসএআইডির প্রধান কার্যালয়ে না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সংস্থার ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছেন, ‘কট্টর বামপন্থী উন্মাদেরা ইউএসএআইডি চালান। ব্যাপক জালিয়াতি করেও সংস্থাটি পার পেয়ে যাচ্ছিল।’

সংস্থাটির মাধ্যমে বিশ্বে হাজার হাজার কোটি ডলারের সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এই সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করেছেন বিরোধী দল ডেমোক্রোটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা। তাদের মতে, এর ফলে বিভিন্ন দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ক্ষতির মুখে পড়বে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমবে।

Explore More Districts