হরিণের বেষ্টনীসংলগ্ন পাশাপাশি দুটি পুকুরে সুন্দরবনের লোনাপানির কুমির আছে। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুকুরপাড়জুড়ে আছে উঁচু বেষ্টনী। বেশ কিছু নারকেলগাছ আছে পুকুরপাড়ে, আর আছে লম্বা লম্বা ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। পর্যটকদের আনাগোনা ইতিমধ্যে বেশ বেড়েছে। তাই পর্যটক এড়িয়ে পূর্ব দিকের পুকুরের পাড় ধরে দক্ষিণের সরু রাস্তা ধরলাম। এ রাস্তায় পর্যটকদের যাতায়াত নেই। তা ছাড়া পাশের বন থেকে গাছের ডালপালা রাস্তাটিকে প্রায় ঢেকে ফেলেছে। অন্য পাশে হরিণের বেষ্টনী। ফলে রাস্তা ধরে হাঁটা কিছুটা কঠিন। কিছু দূর এগোলেই পুকুরপাড়ের উঁচু দেয়াল। এ পাশে ঘাসগুলোও বেশ লম্বা। ফলে পুকুরের দিকে দৃষ্টি খুব একটা যায় না। জায়গাটি যেহেতু উঁচু, ফলে সুন্দরবনের গোখরা কিংবা রাজ গোখরার ভালো আস্তানা মনে হলো। তাই সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে।
পুকুরের কোনা থেকে কয়েক গজ সামনে এগোনোর পর একটি নারকেলগাছে দৃষ্টি আটকে গেল। গাছের মাঝবরাবর কাণ্ডে ছোট একটি বাদুড়ের মতো কী যেন ঝুলে আছে। বিপরীত দিকে তখন সূর্য। ফলে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। একটি নারকেলপাতা ঝুলে আছে গাছের উল্টো দিকে। বাতাসে কিছুটা দুলছে। ফলে মাঝেমধ্যে ছবি তোলার সুযোগ আসছে। কিন্তু জুতসই দাঁড়াতে পারছি না। কোনোরকমে কয়েকটি ছবি তুলে ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে দেখে ধারণা সত্যি হলো। বেশ ছোট আকারের একটি বাদুড় নারকেলগাছের বাকলের সঙ্গে ছোট্ট নখর আটকে ঝুলে আছে। আমার উপস্থিতিতে তার মধ্যে কিছুটা প্রাণের সঞ্চার হলো। একটু নড়ে উঠল। কিন্তু পরিষ্কার ছবি তুলতে পারছিলাম না। পুকুরের দেয়াল টপকে ভেতরের দিক থেকে যে ছবি তুলব, সেটিও বেশ বিপজ্জনক। শিকার ভেবে যেকোনো সময় কুমির এসে আক্রমণ করতে পারে। আমার দুই গবেষণা সহকারীকে ফোনে ডেকে আনলাম বোট থেকে। ওরা আমাকে ধরে কায়দা করে উঁচু দেয়ালে বসিয়ে দিল। ফলে বেশ কিছু ছবি তুলতে সক্ষম হলাম।