গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশব্যাপী সকল দপ্তর সংস্কার হলেও সংস্কার হচ্ছে না ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের চরিত্র। টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না এটা যেন এখন ওপেন-সিক্রেট। ভুক্তভোগীদের নামজারির জন্য যাওয়ার আগেই গুনে রাখতে হয় ৯-১০ হাজার টাকা। এমনই চিত্রের দেখা মিলে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের।
অফিসের এক কর্মকর্তা নূর চৌধুরী প্রকাশ কানোঙ্গ। আবেদনের পর যার হাতের সই নিয়েই অন্য টেবিলে ফাইল যায়। আবার টাকা না পেলে সেই ফাইল হয়ে যায় ক্রটিযুক্ত অথবা পর্যাপ্ত কাগজ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, নূর চৌধুরী প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টা ফাইল দেখেন। প্রতি ফাইল দেখা বাবদ তাকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়। তবে সেই টাকা নিজ হাতে নেয় না। একজন পিয়ন তার প্রতি ফাইলের টাকা জমা রাখে। আর সে টাকা দিন শেষে ভাগ হয়ে দুই পিয়ন পায় ৫০০ করে আর বাকি সব টাকা নূর চৌধুরীর। এছাড়াও পুরো টেবিলেই টাকা দিতে হয়, এ টাকা ভূমি কর্মকর্তা পর্যন্তও যায় বলে জানায় এ ব্যক্তি।
তবে এ বিষয়ে নূর চৌধুরীর সাথে কথা বলার সুযোগ না হলেও একটি ভিডিওতে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, সৌরভ নামের ৯নং সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের একজন অফিস সহায়ক। নিয়মিত অফিস করেন না তিনি। তবে অদৃশ্য শক্তির জোরে করে যান গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা। নামজারি করে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন গ্রাহক থেকে হাজার হাজার টাকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদ আরিফ নামের এক ভুক্তভোগী সৌরভের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছিলেন। তিনি নামজারির প্রস্তাবনা করতে আসলে তাকে দ্রুত করিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করে সৌরভ। পরে তার কাছে ৯ হাজার টাকা দাবি করলে তিনি সে টাকা বিকাশের মাধ্যমে সৌরভকে পাঠান। এরপর থেকে সৌরভ আর কল রিসিভ করেন না, বেশির ভাগ মোবাইল বন্ধ রাখেন। কখনও রিসিভ করলেও ইনিয়ে-বিনিয়ে করে দিবে বলে। শুধু আরিফ নয় এমন অনেক জনের সাথে প্রতারণা করেছে বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে কথা বলতে সৌরভের মুঠোফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে কল গেলেও রিসিভ করেননি তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
ভুক্তভোগী আরিফ জানান, আমি যখন নামজারির প্রস্তাব করতে আসি সৌরভ আমার সাথে কথা বলে। আমি তাকে বলি যেহেতু আমি ঢাকায় চাকরি করি আমার পক্ষে বার বার আসা সম্ভব নয় এখন আমি না এসে কিভাবে নিতে পারি। তখন সৌরভ আমাকে বলে কিছু খরচ দিলে আপনি আসতে হবে না। আমি সবকিছু করে রাখবো আপনি পরে এসে শুধু ফাইলটা নিয়ে যাবেন। আমি তখন খরচের কথা জিজ্ঞেস করলে সৌরভ আমাকে ৯ হাজার টাকা দিতে বলে আমি কমাতে চাইলে সে বলে পুরো টাকা তো আমি রাখবো না। আমি প্রতিটি টেবিলে দিতে হবে। এরপর থেকে তার মোবাইল কখনও বন্ধ, কখনও খোলা থাকলেও রিসিভ করে না, আবার কখনো রিসিভ করলে দিবো দিবো বলে আশ্বাস দেয়।
তিনি আরও বলেন, এখন দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। আমরা সবকিছু থেকে স্বাধীন হতে চাই। ভূমি অফিসে যেসব দুর্নীতিবাজ এখনও বসে আছে তাদের তদন্ত করে যেন দ্রুত আইনের আওতায় আনা হয়।
এবিষয়ে কথা বলতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত চক্রবর্তী সরাসরি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। আপনার অভিযোগ সত্যতা পেয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি এর ব্যবস্থা অবশ্যই নিবো আপনি দেখতে পাবেন স্বচক্ষে। আমরা যে বড় বড় কথা বলি গল্প গুলো বলি, এগুলো তো বলে লাভ নাই। আপনার সমস্যার একটা সমাধান যদি পান সেটা একটা বিষয়।
তিনি আরও বলেন, আপনি যে আমাকে একটা অভিযোগ দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে যদি অ্যাকশনে যাই তাহলে বুঝতে পারবেন কাজ হয়েছে। যদি অ্যাকশন না হয় তাহলে তো বড় বড় কথা বলে লাভ নাই।
এমজে/সিটিজিনিউজ