ভারতীয় চোরাই পণ্য পরিবহনে ব্যবহার হচ্ছে ‘মোংলা কমিউটার’ ট্রেন

ভারতীয় চোরাই পণ্য পরিবহনে ব্যবহার হচ্ছে ‘মোংলা কমিউটার’ ট্রেন

ভারতীয় চোরাই পণ্য পরিবহনে ব্যবহার হচ্ছে ‘মোংলা কমিউটার’ ট্রেন

এসব চোরাই পণ্যের মধ্যে বেশিরভাগই থাকে ভারতীয় বিদেশি কম্বল, কসমেটিকস, চকলেট, ওষুধসহ বিভিন্ন পোশাক ও প্রসাধনী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্ত এবং স্থলবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে এসব পণ্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আনার পর তা বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করতে চোরাকারবারিরা নিরাপদ যান হিসেবে বেছে নেন বেতনা এক্সপ্রেস ও মোংলা কমিউটার ট্রেনটি। তাদের অবৈধ পণ্য পরিবহনের পেছনে আছে বড় একটি সিন্ডিকেট। চোরাকারবারিদের মূল হোতারা গোটা পাচার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। চক্রটি নির্বিঘ্নে চোরাচালান বা চোরাকারবারি করতে বিভিন্ন মহলকে অর্থ দিয়ে হাত করে রেখেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অবৈধভাবে ভারত থেকে এসব পণ্য দেশে ঢোকায় লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

পরিচয় গোপন রেখে চোরাকারবারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারত থেকে আসা প্রতিটি কম্বলের জন্য ৭০ টাকা, কসমেটিকসের ছোট টোপলা ১৫০ টাকা, বড় টোপলা ২০০ টাকা করে ট্রেনের টিটিরা ভাড়া হিসেবে নেন। এসব পণ্য যশোরের নওয়াপাড়া স্টেশন, খুলনা ফুলতলা, বেজেরডাঙা, আড়ংঘাটা, আলমনগর, বাগেরহাটের কাটাখালি এবং মোংলা স্টেশনে নামানো হয়। এবার সেখান থেকে হাত বদল হয়ে বিভিন্ন স্থানে বা বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে এসব চোরাই পণ্যসামগ্রী।

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকতা ফায়েকুর রহমান বলেন, প্রতিদিন যশোর থেকে বেনাপোলে অফিস করি। কিন্তু যাওয়ার সময়ে চোরাকারবারিদের ভিড়ে ট্রেনে কষ্ট করে যাওয়া গেলেও আসার সময় আর আসাতে পারি না তাদের অত্যাচারে।

তিনি আরও বলেন, তারা ট্রেনের সিটের ওপরে, সিটের তলায়, ট্রেনের ব্যাগেজ র‌্যাকে, যাত্রীর দুই সিটের মাঝখানসহ সবখানে মালামাল এমনভাবে রাখে যে হাত-পা নড়াচড়া পর্যন্ত করা যায় না। কেউ কিছু বললে চোরাকারবারিরা দল ধরে তার ওপরে ঝাপিয়ে পড়ে তাকে লাঞ্ছিত করে।

ভারত থেকে আসা যাত্রী গোবিন্দ বর্মন বলেন, ১৫ দিন আগে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আজ দুপুরে বেনাপোলে এসে পৌঁছেছি। খুলনা যাওয়ার জন্য অনেকক্ষণ রেলস্টেশনে অপেক্ষা করার পর বিকেল ৫টার দিকে ট্রেন বেনাপোল পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে চোরাকারবারিরা তাদের মালামাল নিয়ে ট্রেন দখল করে বসেন। তাদের মালামাল ও ঠেলাগুতার কারণে আমি ট্রেনেই উঠতে পারছিলাম না। তারপরেও অনেক কষ্ট করে পরে ট্রেনটির একটি বগিতে উঠি। কিন্তু কোনো বসার জায়গা পাচ্ছিলাম না। সব সিট চোরাকারবারিরা দখল করে রেখেছে। যে সিটে বসতে যাই পাশের থেকে একজন বলে এখানে লোক আছে। তাই উপয়ান্ত না পেয়ে আবার ট্রেন থেকে নেমে একেবারে পিছনের কামরায় গিয়ে উঠে একটি সিট পাই। সেই সিটের তলায়, দুই সিটের মাঝে ও লাগেজ র‌্যাকে চোরাকারবারিদের পণ্যে ঠাসা।

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল মিয়া বলেন, ট্রেনে চোরাচালানের বিষয়টি দেখাশোনার জন্য জিআরপি ও নিরাপত্তা পুলিশ আছে। তাই বিষয়টি তাদের উপরে বর্তায়। বিষয়টি নিয়ে জিআরপি ও নিরাপত্তা পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা।

খুলনা জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ মিজান মোল্যা বলেন, গত দুইদিন ধরে আমি ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্ব পালান করছি। তাই এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

যশোর র‍্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. রাসেল বলেন, র‍্যাব ইতঃপূর্বে চোরাচালান রোধে অভিযান চালিয়েছে। বিভিন্ন চোরাকারবারি পণ্যসহ জড়িতদের আটকও করেছে। পুনরায় নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়েছে। এসব চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লা ইসলাম বলেন, গোটা সীমান্ত জুড়ে বিজিবি কঠোর নজরদারি রেখেছে। তবে দেশের অভ্যন্তরে চোরাচালান রোধে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আছে। চাইলে তারও বিষয়টি দেখতে পারে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য ‘বেতনা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি খুলনা থেকে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে সকাল সাড়ে ৮টায় বেনাপোলে পৌঁছে। এরপর একই ট্রেন ‘মোংলা কমিউটার’ নাম ধারণ করে সকাল সাড়ে ৯টা ১৫ মিনিটে মোংলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মোংলা থেকে আবার দুপুর ১টায় সেটি ছেড়ে বিকাল সাড়ে ৪টায় বেনাপোল পৌঁছায়। সবশেষ ট্রেনটি বেতনা নাম ধারণ করে বেনাপোল থেকে বিকাল ৫টায় ছেড়ে খুলনায় পৌঁছায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।

Explore More Districts