পলাশে ইছাখালী ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসায় নিয়োগ-বাণিজ্যে ফেঁসেও বহাল তবিয়তে অধ্যক্ষ
নরসিংদীর পলাশে নানা অনিয়মসহ নিয়োগ বাণিজ্যে ধরা খেয়েও অটুট রয়েছেন ইছাখালী ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার অধ্যক্ষ আ.ক.ম রেজাউল করীম। তিনি সম্প্রতি কয়েকজন নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীর কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়েছেন এবং চাকরি না হওয়ায় ফেরত দিয়েছেন বলেও জানা যায়।
এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলেও এ বিষয়ে গত দুই মাসে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বিতর্কিত পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা মাদরাসায় যোগদান করে নিয়মিত চাকরি করছেন। এ নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অধ্যক্ষের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার কল রেকর্ড ফাঁস হয়, বিষয়েগুলো প্রকাশ্যে আসে। আমরা সরাসরি বরখাস্ত করতে পারি না। তাই মাদরাসার গভর্নিং বডির বরাবর একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। এরপর জানা যায় ওই মাদরাসার সভাপতি আবু কাউছার পদত্যাগ করেন। তখন গভর্নিং বডি না থাকায় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি। এখন মাদরাসার নতুন সভাপতি ও ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র আল মুজাহিদ হোসেন তুষার বরাবর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আমরা সোমবার (১৩ মে) আরেকটি চিঠি দিয়েছি।
মাদরাসার সভাপতি ও ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র আল মুজাহিদ হোসেন তুষার বলেন, আমি সভাপতি হওয়ার পর ঈদের আগে একটি মাত্র মিটিং হয়েছে। মঙ্গলবার আমি চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে লেখা আছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এ বিষয়ে গভর্নিং বডির ১৯তম সাধারণত সভা। সভা শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মিলন কান্তি কৃষ্ণ হালদার বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি। সামনের মিটিংয়ে এ বিষয়ে মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদের আলোচনা হবে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানানো যাবে।
এর আগে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ইছাখালী ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার অধ্যক্ষ আ.ক.ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার ব্যবস্থা নিতে তৎকালীন সভাপতি সরকার কাউছার আহম্মদকে জেলা প্রশাসন নরসিংদী থেকে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠিতে অধ্যক্ষ আ.ক. ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অসদাচরণের দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, নিয়োগ প্রার্থীদের চাকরি প্রধানের প্রলোভন দেখিয়ে আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত মর্মে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। যা প্রকাশিত অডিও ক্লিপের কথোপথনের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান।
উল্লেখ্য, গত ১৪ ডিসেম্বর তিনটি শূন্য পদের বিপরীতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে ইবতেদায়ী শাখার প্রধান, কম্পিউটার অপারেটর ও ল্যাব সহকারী পদের জন্য আবেদন চাওয়া হয়। পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ওইদিন বিকেলে কম্পিউটার অপারেটর পদে পলাশ উপজেলার তানভীর আহমেদ ও ল্যাব সহকারী পদে শিবপুর সাধারচর এলাকার ইতি আক্তারকে নির্বাচিত করা হয়।
এরপর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, নিয়োগ পরীক্ষার অন্য আবেদনকারীর সঙ্গে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের ফোনে প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হলে দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে সর্বমহলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আ.ক.ম রেজাউল করিম। তার দাবি, এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। এসব একটি কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র। কল রেকর্ডটি ওনার অনুমতি ছাড়া ধারণকৃত। যা সংবিধান বিরোধী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।