শুল্ক কমানো পণ্যগুলোর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী

শুল্ক কমানো পণ্যগুলোর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সরকার পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে চাল, তেল, চিনি ও খেজুরের শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপনে এসব পণ্যের বিভিন্ন পর্যায়ের শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ চাল, তেল, চিনি ও খেজুরের শুল্ক কমানো হয়েছে। এর আগে রমজানের আগে এসব পণ্যের শুল্ককর কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরের কাছে অনুরোধ জানানো হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর এসব পণ্যের শুল্ককর কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ সুবিধা চাল আমদানিকারকেরা পাবেন আগামী ১৫ মে পর্যন্ত। তবে এ সুবিধা পেতে আমদানির প্রতিটি চালানের বিপরীতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার লিখিত অনুমোদন লাগবে। তেলের ক্ষেত্রে দেশে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর বা মূসক বা ভ্যাট পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দেশে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে আপাতত ভ্যাট দিতে হবে না এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের। তবে এ সুবিধা তাঁরা পাবেন আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এ ছাড়া বিদেশ থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম তেল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ের ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। তার মানে সয়াবিন ও পাম তেলের আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট কমানো হয়েছে। আমদানিকারকেরা এ সুবিধা পাবেন ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এদিকে রোজার অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। বর্তমানে খেজুর আমদানিতে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ। রমজানকে সামনে রেখে সেটি কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। খেজুর আমদানিকারকেরা ১০ শতাংশ কম শুল্কে আমদানির এ সুবিধা পাবেন আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত। এছাড়া পরিশোধিত ও অপরিশোধিত উভয় ধরনের চিনি আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক কমিয়ে করা হয়েছে দুই হাজার টাকা, আগে যা ছিল তিন হাজার টাকা। এনবিআর জানিয়েছে, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে এ শুল্ক ছাড় পাওয়া যাবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। শুল্ককর কমানো সংক্রান্ত এনবিআরের আলাদা এসব প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের জারি করা এসব প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি। যদিও তা আজ জানা গেছে। সেই হিসেবে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তগুলো এরই মধ্যে কার্যকর হয়ে গেছে বলে জানান এনবিআর-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে সরকারের এ উদ্যোগকে আমরা সময়োপযোগী এবং বাস্তবসম্মত বলে মনে করি। কারণ যে পণ্যগুলির আমদানী শুল্ককর কমানো হয়েছে সাধারণত রমজানে এ পণ্যগুলির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরী করে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। যার ফলে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ ভোক্তাশ্রেণী। এ বছর রমজানকে কেন্দ্র করে যাতে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা করতে না পারে সেজন্য বাজারে শৃঙ্খলা আনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির তৎপরতা লক্ষণীয়। এছাড়াও বাজরে বিশেষ চাহিদার পণ্যগুলিরও আমদানী শুল্ক কমানো হয়েছে বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য। আমরা মনে করি সরকারের এ উদ্যোগ সফল হবে। বাজারের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দূরীভূত হবে। বিশেষ করে সিয়াম সাধানার রমজান মাসে মানুষ স্বস্তিতে থাকতে পারবে। এক্ষেত্রে আমরা সরকারের তদারককারী সংস্থাসমূহকে আহবান জানাবো তারা যেন বিরতিহীনভাবে বাজার পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত থাকে। কারণ এমনিতে বিশ্ববাজারে অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে বাংলাদেশের বাজারেও মুদ্রাস্ফীতির উর্ধ্বমুখী চাপে ভোক্তারা কার্যত দুর্ভোগে রয়েছে। আমরা মনে করি সরকারের এ উদ্যোগের সাথে সাথে যদি সহযোগী সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকে এবং ভোক্তারা যদি সচেতন থাকে তাহলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে কেউ অবৈধ মুনাফার পাহাড় গড়ে তুলতে পারবে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিরও ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন এবং খালাসে অবৈধ চাঁদাবাজি যাতে কেউ করতে না পারে সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। আসলে সকলের সমন্বিত এবং সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমেই বাংলাদেশের বিশাল বাজার ব্যবস্থাপনাকে একটি নিয়মের মধ্যে আনা সম্ভব। আমরা বিশ্বাস করতে চাই পর্যায়ক্রমে আমাদের বাজারে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। যার মধ্য দিয়ে মুদ্রাস্ফীতির দৌরাত্ম কমানোর পাশাপশি বাজার ব্যবস্থাপনাকে কুক্ষিগত করে অসাধু চক্র জনগণের ভোগান্তি বাড়াতে পারবে না।

 

Explore More Districts