কুয়েটে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৪, সাময়িক বহিষ্কার ২১ শিক্ষার্থী

কুয়েটে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৪, সাময়িক বহিষ্কার ২১ শিক্ষার্থী

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসময় লালন শাহ হলে থাকা ৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে তাহমিদুল হক ইশরাক নামে এক ছাত্রকে গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় ২১ শিক্ষার্থীকে লালন শাহ হল থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সূত্র জানায়, খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান মনোনয়ন না পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হল ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী আনন্দ মিছিল করে গত ২৬ নভেম্বর। একই সাথে আসনটিতে নতুন মনোনয়ন পাওয়া আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনকে স্বাগত জানায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রুদ্র নীল সিংহ ওই ছাত্রদের হল থেকে বের করে দেয় বলে অভিযোগ ছিলো। সেই সময় থেকে আসনটির নতুন সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেনের অনুসারীরা হলের বাইরে ছিলো। বিষয়টি নিয়ে হলের বাইরে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এস এম কামাল হোসেনের কাছে অভিযোগ করে। এরপর এস এম কামাল হোসেন ছাত্রলীগ সভাপতি রুদ্র নীল সিংহকে ছাত্রদের হলে উঠিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে বলে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা জানায়। এরই মধ্যে হলের বাইরে থাকা ছাত্রদের পরীক্ষা শুরু হয়। গত রোববার রাতে হলের বাইরে থাকা ছাত্ররা হলে প্রবেশ করতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি রুদ্র নীল সিংহের অনুসারীরা বহিরাগতদের নিয়ে তাদের হলে প্রবেশে বাধা দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এক পর্যায়ে সেটি সংঘর্ষে রুপ নেয়। সংঘর্ষে চারজন ছাত্র আহত হয়েছে। আহতরা হচ্ছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫ ব্যাচের তাহমিদুল হক ইশরাক, সিভিল ১৮ ব্যাচের যোবায়ের হোসেন নাইম, মেকানিক্যাল ১৭ ব্যাচের সাফায়েত সাইমুম, ম্যাকাট্রোনিক ১৮ ব্যাচের নিলান খালেক পারাবার। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫ ব্যাচের তাহমিদুল হক ইশরাককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
সংঘর্ষের বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রুদ্র নীল সিংহ বলেন, ‘কোন ছাত্রকে আমরা হল থেকে বের করে দেইনি। যারা বাইরে ছিলো তারা অনেক আগে থেকেই বাইরে ছিলো। কালকে আমি হলে ছিলাম না। কি নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছে তা আমি জানিনা। পরে সাধারণ ছাত্রদের কাছে শুনলাম মাদকের সাথে জড়িত কয়েকজন ছাত্র জোর করে হলে প্রবেশ করতে চাইলে সাধারণ ছাত্ররা তাদের বাধা দেয়। এই নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই।’
এদিকে রোববার রাতে সংঘর্ষের পর লালন শাহ হল থেকে ২১ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। বহিস্কৃতরা হলেন, সাফায়েত সাইমুম, নিলান খালেক পারাবার, আব্দুল্লাহ্ ইবনে জয়নাল, শাহরিয়ার ফেরদৌস ওশান, শাহনেওয়াজ পারভেজ শুভ, তৈয়ব ইযাসির নিলয়, জুনায়েত হক সরকার, জুবাইদুর হোসেন নাঈম, মোঃ সাব্বির হোসেন, মোঃ আদনান ইসলাম (শামস), তাহমিদুল হক ইশরাক, মিনহাজুর রহমান আবরার, ফজলে রাব্বি, সাদিক বিন ফারুক, আবির হাসান, মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক, অমিত কুমার ঘোস, অরিত্র দেবনাথ পৃথু, মেফতাউল মাহমুদ, সুদীপ্ত তালুকদার, মিজানুর রহমান (মুহাসিন)।
লালন শাহ হলের প্রভোষ্ট মো: আব্দুল হাফিজ মিয়া বলেন, কিছু ছাত্র হলের বাইরে ছিলো। তারা রবিবার রাতে হলে উঠতে চাইলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় ২১ ছাত্রকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।
সংঘর্ষের বিষয়ে কুয়েটের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ডঃ মো. আব্দুল মতিন জানান, রোববার রাতে ছাত্রদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। সেটি মারামারিতে রুপ নেয়। আমরা জানতে পেরে উভয় পক্ষকে থামাতে চেষ্টা করি। একই সাথে পুলিশ এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয়া হয়।
এ বিষয়ে কুয়েট উপাচার্য প্রফেসর ড. মিহির রঞ্জন হালদার বলেন, ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত প্রতিবেদন দিলে বিস্তারিত জানা যাবে।

Explore More Districts