পাকিস্তানের নজরে ১৯৭১

পাকিস্তানের নজরে ১৯৭১

গর্বিত চিত্তে বিজয়ের ৫৩ বছরে পদার্পণ করল আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়। প্রতি বছর এই দিনটিকে ধুমধামে উদযাপন করি আমরা। কিন্তু যুদ্ধে হেরে যাওয়া পাকিস্তানের কাছে ১৯৭১ সাল ও মুক্তিযুদ্ধ আসলে কেমন?

১৯৭১ সালের যুদ্ধকে পাকিস্তানিরা ‘ফল অব ঢাকা’ নামে আখ্যায়িত করে। পাকিস্তানের অধিকাংশ সাধারণ জনগণ জানেই না মুক্তিযুদ্ধের অমানবিক নৃশংসতার কথা। ৫২ বছর পরও পাকিস্তান এই হারকে মেনে নিতে পারেনি। তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করতে নারাজ। বরং তারা পুরো ঘটনাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। দীর্ঘ চার যুগেরও বেশি সময় ধরে তারা মু্ক্তিযুদ্ধের ঘটনাকে ভারতের ষড়যন্ত্র বলে প্রচার করে চলেছে। তাদের বিভিন্ন পাঠ্যবই, চলচিত্র, ইতিহাস ও তথ্যসূত্রে তারা এটাই প্রচার করে বেড়ায়। বঙ্গবন্ধু, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের মতো ব্যক্তিত্বকে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে প্রচার করে।

যুদ্ধের হারকে তারা নিজেদের সামরিক অক্ষমতা বলে মনে করেন। এখনো ৭১ এর উদাহরণ টেনে তারা নাগরিক এবং নতুন প্রজন্মকে সামরিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা শেখায়। তারা যুদ্ধের পুরো ঘটনাকে জনসাধারণের মনে ভারত ও হিন্দু মনোভাব তৈরিতে ব্যবহার করে। বাঙালিদের প্রতি করা প্রশাসনিক অসমতা, যুদ্ধকালীন অত্যাচার, সামরিক নিপীড়ন, নৃশংসতা, গণহত্যা, ধর্ষণ- এসব ঘটনা সাধারণ জনগণের কাছে গোপন করে রাখার চেষ্টা করে তারা। তাদের মতে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ খুবই নিরীহ ছিল। ভারতের চাটুকারিতায় পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু শিক্ষক ও নেতারা প্রভাবিত হয় এবং পাকিস্তান বিভাজনে উদ্যত হয়েছিল। বাঙালি জনগণও তাই নেতাদের অন্ধবিশ্বাস করে অনুসরণ করতে শুরু করে।

ভারতীয় উপমহাদেশে দীর্ঘ প্রায় ২শ বছর যুক্তরাজ্যের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজত্ব করার সময় বেশ অনেকটা প্রভাব ফেলেছে। তার ছাপ রয়ে গেছে ব্রিটিশ বিদায় হওয়ার পরও। তারা নিজেদের ঐশ্বর্য্যশালী করার জন্য আমাদের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে অন্যায় করে গেছে। এখানকার সম্পদ লুট করে নিজেরা ফুলে ফেপে উঠেছে। এমনকি ভারতীয় উপমহাদেশকে খণ্ডিত করার জন্য তারা সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনে যায় মানুষের মধ্যে।

১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান দু’টো উপরাষ্ট্র হলো। ব্রিটিশদের থেকে মুক্তি পাওয়ার পর যখন পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে দেশ পরিচালনার ভার গেল তখন পাকিস্তান সরকার তাদের পদচারণাই অনুসরণ করলেন। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে তারা সব ব্যাপারে অসামঞ্জস্যতা শুরু করলো। তার জের ধরেই ক্ষোভ জমতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানিদের মনে। যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল, তখন তারা হিংস্র বাঘের মতো ঝাপিয়ে পড়লো স্বাধীনতার লালসায়।

স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের সূত্রপাত হয় পাকিস্তানিদের পরাজয় মেনে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। তবে এভাবে হার মেনে নেওয়া ছিল তাদের কাছে অপমানের। রাজত্ব হারানোর পর জাতির মেরুদণ্ড ভাঙার উদ্দেশে যেমন ব্রিটিশরা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগিয়েছিল; তেমনভাবেই পাকিস্তানিরা আমাদের পঙ্গু করার উদ্দেশে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করে। তাই ১৬ ডিসেম্বর লিখিতভাবে যুদ্ধ শেষ হলেও বাংলাদেশের কিছু অংশজুড়ে যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। ২২ ডিসেম্বর অবধি বন্দুক যুদ্ধ চলেছে এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার কালো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হয় ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি অবধি। তথ্যসূত্র অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান শেষ বুদ্ধিজীবী হত্যার শিকার হন।

Explore More Districts