সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপূর্ব লীলাভূমি পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত সাগরকন্যা নামে পরিচিত এই পর্যটন কেন্দ্রটি একযুগ আগেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা ছিল। ছিল হাজার হাজার একর জায়গা নিয়ে নারিকেল, শাল, তাল, আকাশমনি, কেওড়াসহ বিভিন্ন জাতের গাছের বাগান।
বালু ক্ষয়, অব্যবস্থাপনা, যথাযথ ডাস্টবিন ব্যবস্থা না থাকা, ব্যবসায়ীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বিষয়ে সচেতনতার অভাব এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও সাগরের ভাঙ্গনে কুয়াকাটার সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখন ধূসর হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত সৌন্দর্য হারাচ্ছে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। দেখার মতন যেন কেউই নেই।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াকাটা সৈকতে যাওয়ার মূল সড়কের দুই পাশের সৈকত এলাকা ভেঙে এবড়ো-থেবড়ো হয়ে গেছে। সৈকত লাগোয়া পর্যটন পার্ক, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে। তাছাড়া সাগরের প্রবল জোয়ারের কারণে সৈকতের পূর্ব পাশের বাগান, পূর্ব দিকের জাতীয় উদ্যান ও গঙ্গামতি সৈকত এলাকায় বন বিভাগ সৃজিত বাগানের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ উপড়ে পড়েছে। যেটি সৌন্দর্য হারানোর পাশাপাশি পর্যটকদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
এছাড়াও সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার মূল সড়কটির অন্তত ৩০ ফুট সাগরে গিলে খেয়েছে। এককথায় কুয়াকাটা সৈকতে দাঁড়ালে মনে হবে- এ যেন এক বিধ্বস্ত নগরী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সাগরের প্রবল জোয়ারের কারণে ভাটার সময় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ওপরের স্তরের মিহি বালু গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যাওয়ার কারণে সৈকতটি ক্রমেই ছোট ও সরু হয়ে যাচ্ছে। কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় ৭৫৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাউবোর পক্ষ থেকে তৈরি করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হয়ে কবে নাগাদ ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, তা পাউবো নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বার্তা২৪’কে জানান, ‘সমুদ্রের প্রবল জোয়ারে সৈকত এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ গাছ উপড়ে পড়েছে। সর্বশেষ এ বছর বর্ষা মৌসুমে সমুদ্রের কয়েক দফা জোয়ারের কারণে এসব বাগানের বেশি ক্ষতি হয়েছে। খুব দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিমিষে হারিয়ে যাবে।’
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ বলেন, ‘তিন বছর ধরে এমন পদ্ধতিতে সৈকতের ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, বর্ষার সময়ে এ কাজগুলো করা হয়। এতে কেবল অর্থের অপচয় হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’

এছাড়াও তিনি এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বার্তা২৪’কে বলেন, কুয়াকাটা সৈকতটি একসময় সাড়ে তিন কিলোমিটার প্রশস্ত ছিল। ২০১০ সাল থেকে কুয়াকাটা সৈকত বা পর্যটন এলাকা তুলনামূলক বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে। বছরে গড়ে ১৫০ মিটার করে ভাঙলে গত ১৩ বছরে কমপক্ষে ১ হাজার ৯৫০ মিটার সৈকত এলাকা সাগরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে সৈকতের কোথাও এখন ১ হাজার ৫৫০ মিটার, আবার কোথাও ১ হাজার মিটার এবং কোনো কোনো জায়গায় সৈকতের প্রশস্ততা ৫০০ মিটারে গিয়ে ঠেকেছে। যার কারণে সৈকতের বেলাভূমির কোনো কোনো অংশে এখন আর জোয়ারের সময় হাঁটার পথ (ওয়াকিং জোন) থাকে না।

কলাপাড়া উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন অলীদ বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প নামে ৭৫৯ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিলাম। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে তা থেকে কিছু সংশোধন করার জন্য বলা হয়। সংশোধন করে প্রকল্প প্রস্তাবনাটি আবার জমা দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প অনুমোদন করা হলে স্থায়ীভাবে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার কাজ শুরু হবে।’
প্রকল্প অনুমোদিত হয়ে কবে নাগাদ ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি এ কর্মকর্তা।