পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর কোনো প্রার্থী নেই

পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর কোনো প্রার্থী নেই

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি আসনে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর কোনো প্রার্থী নেই। ২০০১ সাল থেকে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার কাঠামোর নির্বাচনে জাতীয় বড় দুই দলের সাথে মাঠে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়ে আসছে আঞ্চলিক সংগঠন সমর্থিত প্রার্থীদের। তবে এবার নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকা, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণ দেখিয়ে তারা নির্বাচনে আসেনি।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলায় মোট ভোটার ৫ লক্ষ ১৫ হাজার ৪শ ১৯ জন। এর অর্ধেক ভোটারই পাহাড়ি। আঞ্চলিক সংগঠনগুলো নির্বাচনে না আসায় পাহাড়ি ভোটারের সংখ্যা কমে যাবে বলে মনে করছে সুশীল সমাজ। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির স্বাক্ষরের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ভোটের মাঠে প্রত্যক্ষভাবে খাগড়াছড়ি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। পরের নির্বাচনে অন্য সংগঠনগুলোও অংশ নেয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তার ধারাবাহিকতা ছিল।

তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইউপিডিএফসহ অনিবন্ধিত কোনো আঞ্চলিক সংগঠন ভোটে প্রার্থী দেয়নি। বিগত কয়েকটি নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দলের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে আঞ্চলিক সংগঠন সমর্থিত প্রার্থীদের। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ইউপিডিএফ (প্রসীত)। দশম সংসদ নির্বাচনে প্রসীত বিকাশ খীসা (ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী) ৬৭ হাজার ৭০০ ভোট পান। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নতুন কুমার চাকমা (ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী) ৬০ হাজার ৩শ ৪০ ভোট পান। অতীতে যেকোনো নির্বাচনে জাতীয় দলগুলোর সাথে প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ থাকলেও এ নির্বাচনে ভিন্ন অবস্থানে সংগঠনগুলো।

ইউপিডিএফের (প্রসীত সমর্থিত) জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, দেশে ভোটের পরিবেশ নেই। চলমান রাজনীতির পরিবেশ নির্বাচনের জন্য অনুকূল নয়। সরকার একতরফা নির্বাচন করছে। তাই ইউপিডিএফ এই নির্বাচনে যাচ্ছে না।

গত নির্বাচনে প্রত্যক্ষ প্রতিযোগিতায় না থাকলেও পরোক্ষভাবে ক্ষমতাসীন জোটের প্রতি সমর্থন ছিল জনসংহতি সমিতি এমএন লারমার। এবার এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি বলছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সভাপতি বিমল কান্তি চাকমা বলেন, আমরা প্রতিবারই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যাই হোক। তবে এবার দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এখনো সিন্ধান্ত নিইনি। আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

নির্বাচনে সরাসরি অংশ না নিলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ইশতেহারে ঘোষণার দাবি তুলে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের সাংগঠনিক সম্পাদক অমর জ্যোতি চাকমা বলেন, আমরা এমন প্রার্থী চাই যিনি চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করবেন।

আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর নির্বাচন বর্জন ভোটারের উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে সুশীল সমাজ। খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনে ইউপিডিএফসহ আঞ্চলিক সংগঠন বড় ফ্যাক্টর। এবার তারা নির্বাচনে আসছে না। এটা ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে।

তবে পাহাড়ি ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন করেছে তা দেখে জনগণ নৌকায় ভোট দেবে মনে করছে আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, গত ১৫ বছরে খাগড়াছড়িতে কৃষি, যোগাযোগ, পর্যটনসহ প্রতিটি সেক্টরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে।

Explore More Districts